সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা ২০২৪
List of Schengen countries: ইউরোপ মহাদেশ শুধুমাত্র তার সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির জন্যই নয়, বরং তার অত্যাধুনিক যাতায়াত ব্যবস্থার জন্যও বিখ্যাত। ১৯৮৫ সালে স্বাক্ষরিত ‘শেঙেন চুক্তি’ ইউরোপের অনেক দেশের মধ্যে যাতায়াতকে আরও সহজ করে তুলেছে। এই চুক্তিতে অংশগ্রহণকারী দেশগুলি ‘শেঙেন অঞ্চল’ নামে পরিচিত। আর আজকের আলোচনায় আমরা সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা সম্পর্কে জানবো।
সেনজেন বলতে কি বুঝায়?
What does Schengen mean: সময়টা ছিলো ১৯৮৫ সাল, সেই সময়ে ইউরোপ মহাদেশের সেনজেন শহরে বিশেষ এক ধরনের চুক্তি করা হয়েছিলো। যে চুক্তির মূল লক্ষ্য ছিলো, ইউরোপ মহাদেশের অর্ন্তগত দেশ গুলোর যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ করা। এছাড়াও ইউরোপের দেশ গুলোকে একীভূত করা।
তো উক্ত চুক্তির মধ্যে ইউরোপ এর যে সকল দেশ স্বাক্ষর করেছিলো। সেই দেশ গুলোকে একত্রে বলা হয়, সেনজেন এড়িয়া বা সেনজেন অঞ্চল। বর্তমান সময়ে মোট ২৭ টি দেশ এই সেনজেন অঞ্চলের তালিকায় যুক্ত রয়েছে।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার উপায়
সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা | List of Schengen countries
List of Schengen countries: উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, সেনজেন কি বা সেনজেন অঞ্চল বলতে কি বুঝায়। তো সেখানে আমরা জানতে পেরেছি যে, বর্তমানে মোট ২৭ টি দেশ এই সেনজেন অঞ্চল এর আওতায় রয়েছে। আর সেই দেশ গুলো হলো,
- স্লোভাকিয়া (Slovakia),
- লিচেনস্টেইন (Liechtenstein),
- ডেনমার্ক (Denmark),
- এস্তোনিয়া (Estonia),
- অস্ট্রিয়া (Austria),
- স্লোভেনিয়া (Slovenia),
- ইতালি (Italy),
- ফিনল্যান্ড (Finland),
- বেলজিয়াম (Belgium),
- নেদারল্যান্ডস (Netherlands),
- জার্মানি (Germany),
- ফ্রান্স (France),
- লিথুয়ানিয়া (Lithuania),
- চেক প্রজাতন্ত্র (Czech Republic),
- হাঙ্গেরি (Hungary),
- সুইজারল্যান্ড (Switzerland),
- লাক্সেমবার্গ (Luxembourg),
- পোল্যান্ড (Poland),
- পর্তুগাল (Portugal),
- স্পেন (Spain),
- গ্রীস (Greece),
- সুইডেন (Sweden),
- আইসল্যান্ড (Iceland),
- মাল্টা (Malta),
- নরওয়ে (Norway),
- লাটভিয়া (Latvia),
- ক্রোয়েশিয়া (Croatia),
উপরে আপনি যে সকল দেশের নাম দেখতে পাচ্ছেন। মূলত এই দেশ গুলো সেনজেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলো। আর সে কারণে এই দেশ গুলোকে বলা হয়, সেনজেন অঞ্চল বা সেনজেন এলাকা।
আরো পড়ুনঃ মালয়েশিয়া ই ভিসা কি? চেক করার নিয়ম
সেনজেন অঞ্চল এর বৈশিষ্ট গুলো জেনে নিন
Characteristics of the Schengen area: আমরা জানতে পারলাম যে, মোট ২৭ টি দেশ মিলে সেনজেন অঞ্চল গঠন করা হয়েছে। আর এই বিশেষ সেনজেন অঞ্চল এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেগুলো সম্পর্কে আমাদের জেনে নেওয়া উচিত। আর সেই বৈশিষ্ট্য গুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।
- সেনজেন অঞ্চলের সদস্য দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য পাসপোর্ট বা ভিসার প্রয়োজন হয়না।
- অধিকাংশ সেনজেন দেশ একক মুদ্রা হিসেবে ইউরো ব্যবহার করে।
- সেনজেন অঞ্চলে আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই-এর জন্য সহযোগিতা করে।
- সীমান্তহীন ভ্রমণ সেনজেন অঞ্চল পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
- সেনজেন অঞ্চলের নাগরিকরা যেকোনো সদস্য দেশে কাজ করতে পারে।
- সেনজেন অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সহজেই বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারে।
- সেনজেন অঞ্চল বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার সুযোগ করে দিয়েছে।
তো বর্তমানে যে ২৭ টি দেশ সেনজেন এলাকায় সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। সেই দেশ গুলোর যে সকল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, সেগুলো উপরে উল্লেখ করা হলো। আশ করি, আপনি সেগুলো সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা পেয়ে গেছেন।
আরো পড়ুনঃ কম খরচে ইউরোপের কোন দেশে যাওয়া যায়?
সেনজেন মানচিত্র | সেনজেন কান্ট্রি লিস্ট
সেনজেন ভিসা কি? | কিভাবে সেনজেন ভিসা পাওয়া যাবে?
What does Schengen mean: যখন আপনি কোনো দেশে প্রবেশ করতে চাইবেন, তখন আপনাকে সেই দেশের অনুমতি নিতে হবে। আর সেই অনুমতি নেওয়ার ডকুমেন্টস কে বলা হয়, ভিসা। তবে স্বাভাবিক ভাবে যখন আপনি একটি দেশের ভিসা পাবেন। তখন আপনি শুধুমাত্র সেই দেশেই ভ্রমন করতে পারবেন।
অপরদিকে সেনজেন অঞ্চল হলো মোট ২৭ টি দেশ নিয়ে গঠিত। তাই সেনজেন কর্তৃক ভিসার মাধ্যমে আপনি একইসাথে মোট ২৭ টি দেশে ভ্রমন করতে পারবেন। আর সে কারণে এই বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন ভিসা কে বলা হয়, সেনজেন ভিসা।
আর সত্যি বলতে এই সেনজেন ভিসা পাওয়ার কাজটি মোটেও সহজ নয়। বরং প্রথমে আপনাকে সেই সব দুতাবাস এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে, যে দেশ গুলো সেনজেন এর সাথে অন্তুর্ভুক্ত আছে। এছাড়াও যেসব দেশের দুতাবাস আমাদের দেশে রয়েছে।
তারপর আপনাকে সেনজেন ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। তারপর আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দিয়ে ভিসা ফি পরিশোধ করার পর সেনজেন ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ সরকারিভাবে কোন কোন দেশে যাওয়া যায়
স্লোভাকিয়া কি সেনজেন দেশ?
২০০৩ সালের ১৬ এপ্রিল, শেংগেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করার মাধ্যমে স্লোভাকিয়া ইউরোপীয় ঐক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়। এই চুক্তির ফলে, স্লোভাকিয়ার নাগরিকরা পাসপোর্ট বা ভিসা ছাড়াই শেনজেন অঞ্চলের অন্য ২৬ টি দেশে ভ্রমণ করতে পারেন।
সাইপ্রাস কেন সেনজেনভুক্ত নয়?
Why Cyprus is not included in Schengen: একটা বিষয় আমরা সকলেই বেশ ভালো করে জানি। সেটি হলো, বর্তমান সময়ে সাইপ্রাস হলো একটি ইউরোপীয় ইউনিয়ন এর একটি সদস্য দেশ।
কিন্তুু সাইপ্রাস এখনও সেনজেন অঞ্চলের সদস্য দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি। আর সাইপ্রাসের সেনজেন অঞ্চলের সদস্যদেশ না হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো, সাইপ্রাস এর উত্তরাঞ্চল ১৯৭৪ সাল থেকে তুরস্ক দ্বারা দখল করা।
মূলত সাইপ্রাস সরকার সেনজেন অঞ্চলে যোগদান করার জন্য যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তুু তুরস্ক সাইপ্রাস এর যোগদান করার আগ্রহ কে গুরুত্ব দেয়না। যার কারণে সাইপ্রাস এখন পর্যন্ত সেনজেন ভুক্ত অঞ্চলের তালিকায় নিজেদের জায়গা করে নিতে পারেনি।
কসোভো কি সেনজেন ভুক্ত দেশ?
Is Kosovo a Schengen country: আপনারা অনেকেই জানতে চান যে, কসোভো কি সেনজেন ভুক্ত দেশ কিনা। তো যারা আসলে এই বিষয় টি সম্পর্কে জানতে চান। তাদের বলে রাখি যে, এখন পর্যন্ত কসোভো সেনজেন ভুক্ত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।
এর কারণ হলো, যখন কোনো নতুন দেশ সেনজেন অঞ্চলের সাথে যোগদান করতে চাইবে। তখন সেনজেন ভুক্ত সকল দেশের সম্মতি থাকতে হবে। তাহলেই সেই দেশকে সেনজেন অঞ্চলের সাথে অর্ন্তভুক্ত করা হবে।
কিন্তুু কসোভো সেনজেন অঞ্চলের সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করলেও সেই সময় সার্বিয়া তাদের সম্মতি প্রদান করা থেকে বিরত থাকে। যার কারণে কসোভো এখন পর্যন্ত সেনজেন অঞ্চলের আর্ন্তভুক্ত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।
আরো পড়ুনঃ ইউরোপের নন সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা
সর্বশেষ সেনজেন ভুক্ত দেশ কোনটি?
Which is the latest Schengen country: আগের বছর গুলোতে সেনজেন ভুক্ত মোট দেশের সংখ্যা ছিলো ২৬ টি। যদিওবা তারপর থেকে বিশ্বের অনেক দেশ সেনজেন অঞ্চলের সাথে সদস্য দেশ হিসেবে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তুু তাদের মধ্যে ক্রোয়েশিয়া সর্বশেষ সেনজেন ভুক্ত দেশ হতে পেরেছে।
ক্রোয়েশিয়া নামক এই দেশটি ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসের ০১ তারিখে সেনজেন অঞ্চলের যোগদান করার ঘোষনা করে। আর সে কারণে বর্তমান সময়ে সেনজেন ভুক্ত দেশের গুলোর মধ্যে ২৭ তম অংশগ্রহনকারী দেশ হলো, ক্রোয়েশিয়া।
আয়ারল্যান্ড কি সেনজেন ভুক্ত দেশ?
Is Ireland a Schengen country: আয়ারল্যান্ড সেনজেন অঞ্চলের সদস্য হতে পারেনি। তবে এর পেছনে অনেক কারণ আছে। সে গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, সীমান্ত নিয়ন্ত্রন বজায় রাখা।
আমরা সকলেই জানি, যে সকল দেশ সেনজেন অঞ্চলের সাথে যুক্ত হয়। সেই দেশ গুলোতে কোনো ধরনের সীমান্ত নিয়ন্ত্রন রাখা যাবেনা। আর উক্ত অঞ্চলের সাথে যুক্ত থাকা দেশ গুলো অবাধে একে অপরের দেশে যোগাযোগ করতে পারবে।
অপরদিকে আয়ারল্যান্ড সেনজেন অঞ্চলের থাকার পরও তারা তাদের সীমান্ত নিয়ন্ত্রন করতে চায়। মূলত সে কারণেই আয়ারল্যান্ড এখন পর্যন্ত সেনজেন অঞ্চলের সদস্য দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি।
আরো পড়ুনঃ ইউরোপের সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা
সেনজেন দেশের তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উত্তর
Q: সেনজেন দেশ কয়টি?
A: বর্তমানে মোট ২৭ টি সেনজেন দেশ আছে। তবে এখনও অনেক দেশ সেনজেনের সাথে অর্ন্তভুক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
Q: হাঙ্গেরি কি সেনজেন?
A: হ্যাঁ, হাঙ্গেরি সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকায় অন্তর্ভূক্ত একটি দেশ।
Q:সেনজেন ভুক্ত সর্বশেষ দেশের নাম কি?
A: সেনজেন ভুক্ত সর্বশেষ দেশের নাম হলো, ক্রোয়েশিয়া।
Q: শেঙ্গেন ভিসা নিয়ে কোন দেশে যাওয়া যায়?
A:যদি আপনার নিকট শেঙ্গেন ভিসা থাকে তাহলে আপনি সেনজেন ভুক্ত দেশ গুলোতে বৈধ ভাবে ভ্রমন করতে পারবেন।
সেনজেন অঞ্চল নিয়ে আমাদের কিছুকথা
আপনারা যারা সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা জানতে চেয়েছেন। তাদের জন্য আজকের আলোচনা তে সেনজেন ভুক্ত দেশের তালিকা শেয়ার করা হয়েছে। এছাড়াও সেনজেন এলাকা কাকে বলে সে সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা দেওয়া হয়েছে।
আশা করি, আজকের এই লেখাটি থেকে আপনি অনেক উপকৃত হয়েছেন। তো এই ধরনের উপকারী বিষয় গুলো সবার আগে জানতে হলে, Learning Boss এর সাথে থাকার চেষ্টা করবেন। আর আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমার লেখাটি পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।