দলিল তল্লাশি অনলাইনে করার উপায়

বিভিন্ন সময় আমাদের জমির দলিল তল্লাশি করার দরকার হয়। তো সেই সময় আমরা বুঝতে পারিনা যে, কিভাবে আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় জমির দলিল তল্লাশি করতে পারবো। তো আপনিও যদি এই সমস্যা তে পড়েন। তাহলে আজকের এই আর্টিকেল টি আপনার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

কেননা, আজকে আমি আপনাকে জমির দলিল তল্লাশি করার সকল পদ্ধতি গুলোকে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দিবো। আর আপনি যদি উক্ত বিষয় গুলো সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চান। তাহলে আপনাকে পুরো লেখাটি মন দিয়ে পড়তে হবে।

জমির দলিল তল্লাশি কাকে বলে?

সবার শুরুতে আমাদের জানতে হবে যে, জমির তল্লাশি কাকে বলে। কেননা, যখন আপনি উক্ত বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পারবেন। তখন আপনার পরবর্তী আলোচনা গুলো বুঝতে সুবিধা হবে। তাই চলুন সবার শুরুতে জেনে নেওয়া যাক যে, জমির দলিল তল্লাশি কাকে বলে।

মনে করুন, আপনার নির্দিষ্ট একটি জমি আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে। কিন্তুু কোনো কারণে আপনার সেই জমির দলিল টি নষ্ট হয়ে গেছে কিংবা সেটি হারিয়ে গেছে। অথবা আপনার সেই দলিল টি এমন কোনো ব্যক্তির নিকট আছে। যার কাছ থেকে আপনি আর সেই দলিল টি সংগ্রহ করতে পারবেন না।

মূলত সেই সময় আপনাকে একটি নকল দলিল তোলার প্রয়োজন হবে। কেননা, আমরা সকলেই জানি যে, কোনো একটি নির্দিষ্ট জমির দলিল শুধুমাত্র একটিই হয়। সে কারণে পরবর্তী সময়ে আপনার সেই দলিল হাতছাড়া হয়ে গেলে আপনি আর আসল দলিল তৈরি করতে পারবেন না। বরং আপনাকে একটি নকল দলিল বা কপি দলিল তৈরি করতে হবে।

কিন্তুু যদি আপনি এই কাজটি করতে চান। তাহলে আপনাকে সেই জমির দলিল তল্লাশি করতে হবে। এর কারণ হলো, আপনি যতক্ষন পর্যন্ত জমির দলিল তল্লাশি করতে পারবেন না। ততক্ষন আপনি সেই জমির কপি দলিল তৈরি করতে পারবেন না। কারণ, জমির দলিল তল্লাশির মাধ্যমে একটি জমির পূর্বের সকল রেকর্ড গুলোকে খুজে বের করা সম্ভব হয়।

আরো পড়ুনঃ জায়গা জমির হিসাব সম্পর্কে সকল তথ্য জানুন

আইন মোতাবেক জমির দলিল তল্লাশি করা বৈধ নাকি অবৈধ?

সত্যি বলতে যখন আপনি জমি সংক্রান্ত কোনো ধরনের কাজ করবেন। তখন আপনার সেই কাজটি আইন এর দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ নাকি অবৈধ সেটি অবশ্যই জেনে নিতে হবে। ঠিক তেমনি ভাবে আপনি যেহুতু জমির দলিল তল্লাশী করতে চান। সেহুতু আপনার সেই কাজটি আইনগত ভাবে বৈধ নাকি অবৈধ তা অবশ্যই জেনে নিতে হবে।

আর জমি রেজিষ্ট্রেশন আইন ১৯০৮ এর ৬২ ধারা অনুযায়ী, কোনো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বিধান মেনে লিপিবদ্ধ বহি নকল করতে পারবে। এছাড়াও সেই আইনের ৫৭ ধারার মধ্যে উল্লেখ আছে যে, নির্দিষ্ট ফি পরিশোধ করার পর আবেদনকারী ৩ নং বহি লিপিবদ্ধ করতে পারবে। আর প্রয়োজন বোধে সেই ব্যক্তি ৩ নং বহির সূচিপত্র বহি নকল করতে পারবে।

এ গুলোর পাশাপাশি উক্ত আইনের ৫৭ তম ধারাতে আরো বেশ কিছু আইন এর কথা উল্লেখ আছে। যেমন, ৫৭ ধারাতে উল্লেখ আছে যে, সাব রেজিষ্টার এর মাধ্যমে ৩ নং এবং ৪ নং বহির মধ্যে লিখিত বিষয় গুলো তল্লাশি করার মতো বিধান রয়েছে।

আর সেইদিক থেকে বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, একজন ব্যক্তি ইচ্ছে করলে যে কোনো বছরের দলিল তল্লাশি করতে পারবে। তো আশা করি, জমির তল্লাশি আইন সম্পর্কে আপনি পরিস্কার একটা ধারনা নিতে পেরেছেন। তাই চলুন, এবার জেনে নেওয়া যাক যে, কিভাবে জমির দলিল তল্লাশি করতে হয়।

আরো পড়ুনঃ জমির খাজনা চেক করার উপায়

জমির দলিল তল্লাশি করার নিয়ম ‍কি?

তো উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, জমির দলিল তল্লাশি কাকে বলে। এছাড়াও আমাদের দেশের মধ্যে জমির দলিল তল্লাশি বৈধ নাকি অবৈধ সে সম্পর্কে সঠিক তথ্যটি জেনেছি। তাই এবার আমাদের জানতে হবে যে, একজন ব্যক্তি কিভাবে তার জমির দলিল তল্লাশি করতে পারবে। আর উক্ত বিষয় গুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

দেখুন, আপনি যখন কোনো জমির দলিল তল্লাশি করতে যাবেন। তখন আপনার দলিল তল্লাশি কে মূলত ০২ টি ভাগে ভাগ করা হবে। আর সেগুলো হলো, 

  1. যাদের নিকট দলিল আছে ও
  2. যাদের নিকট কোনো দলিল নেই।

তো দলিল তল্লাশির বিষয় গুলোকে এই দুটো ভাগে ভাগ করা হয়। আর আপনার কাছে জমির দলিল থাকলে কিভাবে তল্লাশি করবেন এবং জমির দলিল না থাকলে কিভাবে তল্লাশি করবেন। সেই বিষয় ‍গুলো নিয়ে এবার আমি ধাপে ধাপে আলোচনা করবো।

জমির দলিল থাকা অবস্থায় কিভাবে দলিল তল্লাশি করবেন?

যখন আপনার কাছে দলিল থাকবে এবং আপনি যখন সেই জমির দলিল তল্লাশি করতে চাইবেন। তখন আপনাকে সবার প্রথমে আপনার জমির দলিল তল্লাশি করতে হবে। আর উক্ত কাজের জন্য আপনাকে ভূমি রেজিষ্ট্রি অফিসে যেতে হবে। সেখানে যাওয়ার পর আপনার দলিল তল্লাশি করার জন্য বেশ কিছু তথ্য প্রদান করতে হবে। যেমন,

  1. আপনার দলিল টি কত সালে রেজিষ্ট্রি করা হয়েছে।
  2. সেই দলিল বালাম বইয়ের মধ্যে কত নম্বর পৃষ্ঠার মধ্যে আছে।
  3. আর কত পৃষ্ঠা নকল করা হয়েছে।

আর যখন আপনি রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে এই প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো প্রদান করবেন। এবং আপনি যে রেজিষ্ট্রি অফিসে গিয়ে যে কাগজের মধ্যে এই তথ্য গুলো প্রদান করবেন। সেখানে অবশ্যই রেজিষ্টার এর স্বাক্ষর দিতে হবে।

কিন্তুু সমস্যা হলো, এই তথ্য গুলো আপনি তখনি দিতে পারবেন। যখন আপনার কাছে সেই জমির দলিল থাকবে। তবে আপনার নিকট যদি কোনো ধরনের দলিল না থাকে। তাহলে কিন্তু এই তথ্য গুলো প্রদান করা সম্ভব হবেনা। তো এই ক্ষেত্রে আপনাকে ভিন্ন কিছু কাজ করতে হবে। যেগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো।

জমির দলিল না থাকলে কিভাবে দলিল তল্লাশি করবেন?

উপরের আলোচনা তে যে পদ্ধতি গুলো দেখানো হয়েছে। সেই পদ্ধতি গুলোতে আপনি তখনি জমির দলিল তল্লাশি করতে পারবেন। যখন আপনার কাছে উক্ত জমির দলিল থাকবে। কিন্তুু যখন আপনার কাছে কোনো দলিল থাকবে না। তখন যদি আপনি দলিল তল্লাশি করতে চান। তাহলে আপনাকে রেজিষ্ট্রি অফিসে যেতে হবে।

তারপর আপনাকে সেই জমির বিক্রেতা/ গ্রহীতা/ ক্রেতা বা অন্য কোনো পক্ষের নাম দিতে হবে। এছাড়াও আপনাকে উক্ত জমির মৌজা নং প্রদান করতে হবে। এছাড়াও জমির দলিল তল্লাশি করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমান ফি দেওয়ার প্রয়োজন হয়। আপনাকে অবশ্যই দলিল তল্লাশি করার আগে উক্ত ফি পরিশোধ করে দিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ খাস জমি চেনার উপায় গুলো জেনে নিন

দলিল তল্লাশি করার জন্য কত টাকা ফি দিতে হবে?

দেখুন, এতক্ষনের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, দলিল তল্লাশি করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমান ফি দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তো এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জেগে থাকতে পারে যে, বর্তমান সময়ে দলিল তল্লাশি করার জন্য কত টাকা করে ফি দিতে হবে।

আর আপনি যদি এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আমি বলবো যে, দলিল তল্লাশি ফি এর পরিমান কত টাকা হবে। সেটা মূলত বিভিন্ন বিষয় এর উপর নির্ভর করে। যেমন,

আপনি যদি ০১ বছরের জন্য সূচীবই তল্লাশি করতে চান। তাহলে আপনাকে ২০ টাকা ফি দিতে হবে। কিন্তুু আপনার সূচিবই তল্লাশির সময়সীমা যদি ০১ বছর এর থেকে বেশি হয়। তবে আপনাকে প্রথম বছর এর জন্য ২০ টাকা এবং তার পরবর্তী বছর গুলোর জন্য আপনাকে ১৫ করে দিতে হবে।

তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো। সেটি হলো, আপনি যখন সূচিবই তল্লাশি করবেন। তখন আপনার সর্বোচ্চ ফি এর পরিমান হবে ১৫০ টাকা। অর্থ্যাৎ আপনাকে এর থেকে বেশি টাকা দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না। আর যখন আপনি সূচিবই এর মধ্যে আপনার দলিল খুজে পাবেন। তখন আপনাকে আরো কিছু কাজে খরচ করতে হবে। যেমন, 

বালাম বই তল্লাশি করার জন্য আপনাকে মোট ১০ টাকা ফি দিতে হবে। সেইসাথে আপনাকে মোট ২০ টাকা কোর্ট ফি প্রদান করতে হবে। নকল দলিল টি মোট ৫০ টাকার স্ট্যাম্প এর মধ্যে লিখতে হবে। এর পাশাপাশি জিএফি নামক একটা ফি দেখতে পারবেন। যেখানে আপনাকে প্রতি পাতার দলিল এর জন্য মোট ১৬ টাকা করে ফি দিতে হবে।

এছাড়াও আপনাকে জিজিফি এর জন্য প্রতি দলিলের পাতার জন্য ২৪ টাকা দিতে হবে। আর আপনি যদি উক্ত দলিল টি জরুরী ভাবে নিতে চান। তাহলে আপনাকে জিবিফি এর জন্য ৫০ টাকা করে দিতে হবে। আর যদি আপনার দলিল টি ০৪ পাতার বেশি হয়। তাহলে আপনাকে প্রতি পাতার জন্য ১৫ টাকা করে দিতে হবে।

কিন্তুু সমস্যা হলো, যারা আপনার দলিল এর লেখক হিসেবে থাকবেন। তারা আপনার দলিল লেখার বিনিময়ে এর থেকেও অনেক বেশি টাকা চার্জ করবে। সেক্ষেত্রে আপনাকে ১ হাজার বা ২ হাজার বা তারও বেশি টাকা উক্ত দলিল লেখার বিনিময়ে প্রদান করতে হবে। কিন্তুু যদি আপনি এই কাজ গুলো নিজে থেকে করতে পারবেন। তাদের ক্ষেত্রে কম টাকা খরচ করার দরকার হবে। 

দলিল তল্লাশি অনলাইনে বের করা যাবে কি?

আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যারা আসলে জানতে চায় যে, কিভাবে দলিল তল্লাশি অনলাইন থেকে বের করা যাবে। তো যারা এই কাজটি অনলাইন থেকে করতে চান। তাদের বলবো যে, বর্তমান সময়ে অনলাইনে জমির দলিল তল্লাশি করা সম্ভব নয়। কেননা, জমির দলিল তল্লাশি করার জন্য বিভিন্ন প্রসেসে কাজ করতে হয়।

আর উক্ত কাজ গুলো করার জন্য আপনাকে রেজিষ্ট্রি অফিসে যেতে হবে। তারপর আপনাকে আপনার জমির প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো প্রদান করতে হবে। সেইসাথে উক্ত জমি তল্লাশি করার জন্য আপনাকে নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। তারপর তারা বিভিন্ন প্রসেসে কাজ করে আপনার দলিল তল্লাশি করবে।

কিন্তুু আপনি কখনই নিজের ঘরে বসে আপনার জমির দলিল তল্লাশি করতে পারবেন না। আর বর্তমানে আপনি যদি গুগলে এসে অনলাইনে জমির তল্লাশি করার উপায় গুলো দেখতে পারবেন। সেগুলো আসলে আপনার কোনো কাজে আসবে না। বরং এই পদ্ধতি তে কাজ করলে উল্টো আপনার সময় নষ্ট হবে।

আরো পড়ুনঃ অনলাইনে জমির রেকর্ড যাচাই বাংলাদেশ

দলিলের নকল কোথায় পাওয়া যাবে?

বিভিন্ন সময় আমাদের জমির নকল দলিল সংগ্রহ করার প্রয়োজন হয়। আর সেই সময় আমরা বুঝতে পারিনা যে, কিভাবে আমরা আমাদের জমির নকল দলিল সংগ্রহ করতে পারবো। তো আপনিও যদি এই একই সমস্যার মধ্যে পড়েন। তাহলে আপনি নিচে দেখানো পদ্ধতি ফলো করে জমির নকল দলিল সংগ্রহ করতে পারবেন। যেমন, 

জমির নকল দলিল সংগ্রহ করতে হলে আপনার নিকট অবশ্যই মূল দলিল থাকতে হবে। আর যদি আপনার নিকট মূল দলিল থাকে, তাহলে আপনাকে সবার প্রথমে রেজিস্ট্রি অফিস যেতে হবে। 

তারপর আপনার মূল দলিলের রেজিস্ট্রি কার্যক্রম শেষ হওয়ার সময়। সেই মূল দলিলের শেষ পৃষ্টার উল্টো দিকে “ উক্ত দলিল টি কত সালের, কত নম্বর বালাম বইয়ের, কত পৃষ্ঠা থেকে কত পৃষ্ঠায় নকল করা হয়েছে” এই যাবতীয় বিষয় গুলো দেখতে পাবেন।

তো এই যাবতীয় বিষয় অবশ্যই সাব-রেজিস্ট্রার কর্তৃক স্বাক্ষর করা থাকবে। আর উক্ত তথ্য গুলোর মাধ্যমে আপনি খুব সহজেই রেজিস্ট্রি অফিসে থেকে দলিলের নকল উঠাতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ দলিল যার জমি তার গেজেট | দলিল যার জমি তার গ্যাজেট

আপনার জন্য আমাদের শেষকথা

বিভিন্ন সময় আমাদের জমির দলিল তল্লাশি করার দরকার হয়। তো আপনি কিভাবে আপনার জমির দলিল তল্লাশি করতে পারবেন। সেজন্য আপনাকে কত টাকা ফি প্রদান করতে হবে। আজকের আলোচনা তে এই বিষয় ‍গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

তবে এরপরও যদি আপনার জমির দলিল তল্লাশি করতে কোনো ধরনের সমস্যা হয়। তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। আর এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই ওয়েবসাইটটি কোনও অফিসিয়াল ভিসা বা ভ্রমণ সংস্থা নয় এবং এই সাইটের সমস্ত তথ্য অনলাইন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এবং পসিবল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *