জমির দলিল সার্চ করার নতুন নিয়ম 

New rules for searching land documents: বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের জমির দলিল সার্চ করার প্রয়োজন হয়। আর আপনি চাইলে এখন নিজের ঘরে বসে অনলাইন থেকে জমির দলিল সার্চ করতে পারবেন। তবে সেজন্য আপনাকে কোন ওয়েবসাইট এর মধ্যে যেতে হবে। কি কি কাজ করে আপনার জমির দলিল খুজে বের করতে হবে। এবার আমি এই বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো।

আর আপনি যদি কোনো ঝামেলা ছাড়াই জমির দলিল সার্চ করতে চান। তাহলে নিচের পদ্ধতি গুলো সঠিক ভাবে ফলো করুন।

কিভাবে অনলাইনে জমির দলিল সার্চ করবো?

তো যেহুতু আপনি অনলাইন থেকে আপনার দলিল সার্চ করবেন। সেহুতু আপনার নিকট একটি মোবাইল অথবা কম্পিউটার থাকতে হবে। তারপর সেই ডিভাইসে ইন্টারনেট কানেকশন চালু করার পর। নিচে দেখানো পদ্ধতি গুলো অনুযায়ী কাজ করতে হবে। যেমন,

  1. সবার প্রথমে এখানে ক্লিক করুন।
  2. তারপর আপনি ই পর্চা এর মূল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন।
  3. এখন একটু নিচের দিকে আসলে আপনি বিভাগ নামের অপশনে আপনার বিভাগ সিলেক্ট করে দিন।
  4. এবার আপনাকে আপনার জেলা সিলেক্ট করতে হবে।
  5. তারপর আপনার উপজেলা সিলেক্ট করে দিন।

উপরের কাজ গুলো করার পর আপনি খতিয়ান এর ধরন দেখতে পারবেন।  যেমন, আরএস, বিআরএস, বিএস, সিএস, এসএ ইত্যাদি। তো এখানে আপনার জমির দলিল টি যে খতিয়ান এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। আপনাকে সেই খতিয়ান সিলেক্ট করে দিতে হবে।

  1. এবার আপনাকে আপনার মৌজা নং সিলেক্ট করে দিতে হবে।
  2. তার পরের অপশনে আপনাকে জমির মালিক এর নাম দিতে হবে।
  3. এর পাশাপাশি আপনাকে সেই জমির দাগ নাম্বার প্রদান করতে হবে।
  4. সবশেষে আপনাকে “খুজুন” নামক বাটনে ক্লিক করতে হবে।

যখন আপনি উপরের পদ্ধতি গুলো ফলো করবেন। তারপর তারপর আপনার জমির দলিল সার্চ করতে পারবেন। আশা করি, এভাবে জমির দলিল সার্চ করতে আপনার কোনো ধরনের সমস্যা হবেনা।

আরো পড়ুনঃ দলিল তল্লাশি অনলাইনে করার উপায়

জমির দলিল বলতে কি বোঝায়?

আমরা সকলেই জানি যে, জমিরর দলিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ একট ডকুমেন্টস। যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো জমির মালিকানা নির্ধারন করা হয়ে থাকে। আর সে কারণে আমাদের অবশ্যই জানতে হবে যে, জমির দলিল বলতে কি বোঝায়।

আর সহজ কথায় বলতে গেলে, জমির দলিল মূলত নির্দিষ্ট কোনো লিখিত চুক্তি এবং আইনগ্রাহ্য রুপ কে বোঝানো হয়। আর আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে জমির দলিল বলতে নির্দিষ্ট কোনো জমি ক্রয়-বিক্রয়, বল্টন, হস্তান্তর ইত্যাদি কে বোঝানো হয়।

জায়গার দলিল কিভাবে বের করা যায়?

উপরের আলোচনা তে আমি আপনাকে জমির দলিল সার্চ করার নিয়ম গুলো জানিয়ে দিয়েছি। তবে আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যারা আসলে জায়গার দলিল কিভাবে বের করা যাবে। সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে চায়। তো আপনিও যদি এই বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে শুনুন…

যদি আপনার জমির রেজিষ্ট্রি করার সকল কার্যক্রম সম্পূর্ণ না হয়। তাহলে আপনার জমির দলিল টি আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট যে রেজিষ্ট্রি অফিস আছে। আপনাকে সেখানে যেতে হবে তারপর আপনাকে সেই অফিসে থাকা মূল দলিল এর সাথে মিলিয়ে নিতে হবে।

কিন্তুু যদি আপনার জমির রেজিষ্ট্রি এর সকল কাজ সম্পন্ন হয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে ভিন্ন কাজ করতে হবে। সেজন্য আপনি আপনার এলাকার সংশ্লিষ্ট রেজিষ্ট্রি অফিসে যাবেন কিংবা আপনার জেলা সদরে যাবেন। তারপর সেখানে গিয়ে আপনাকে রেকর্ড রুমে সংরক্ষন করার বালাম বহির সাথে আপনার নিকট থাকা জমির দলিল মিলিয়ে নিতে হবে।

মূলত আপনি উপরের এই পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে জায়গার দলিল বের করতে পারবেন। বলে রাখা ভালো যে, উক্ত কাজটি আপনি অনলাইন এর মাধ্যমে করতে পারবেন না। সেজন্য আপনাকে অবশ্যই রেজিষ্ট্রি অফিসে যেতে হবে।

আরো পড়ুনঃ জায়গা জমির হিসাব সম্পর্কে সকল তথ্য জানুন

জমি রেজিষ্ট্রি করার কতদিন পর জমির দলিল পাওয়া যায়?

জমির দলিল নিয়ে আমাদের আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জেনে নিতে হবে। সেটি হলো, একজন ব্যক্তি যখন তার জমি রেজিষ্ট্রি করবে। তারপর সেই ব্যক্তি মোট কতদিন পর তার জমির দলিল হাতে পাবে। তো সাধারন ভাবে একটি জমির রেজিষ্ট্রি করা হলে পরবর্তী ০৩ মাসের মধ্যে সেই জমির দলিল হাতে পাওয়া যায়।

এছাড়াও সেজন্য আপনাকে জমির আপিল চুড়ান্ত হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। আর উক্ত কাজটি যখন সঠিক ভাবে সম্পন্ন হবে। তারপর আপনি পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে আপনার জমির দলিল সংগ্রহ করতে পারবেন।

পুরাতন দলিল কোথায় পাওয়া যায়?

বিভিন্ন সময় আমাদের পুরাতন দলিল এর প্রয়োজন হয়। আর সেই সময় আমরা বুঝতে পারিনা যে, কিভাবে আমরা আমাদের পুরাতন দলিল সংগ্রহ করতে পারবো। তো যদি আপনার কখনও পুরাতন দলিল এর দরকার হয়। তখন আপনি সেই পুরাতন দলিল মোট দুইটি মাধ্যম থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। যেমন,

  1. জেলা রেজিষ্ট্রি বা সদর রেকর্ড রুম অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। এবং 
  2. আপনার উপজেলা সাব রেজিষ্ট্রি অফিস থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন।

উপরে আপনি যে দুইটি মাধ্যম দেখতে পাচ্ছেন। মূলত এখান থেকে আপনি আপনার জমির পুরাতন দলিল সংগ্রহ করতে পারবেন। এছাড়াও উক্ত মাধ্যম গুলো থেকে আপনি নির্দিষ্ট কোনো জমির নতুন দলিল এর নকল উত্তলন করতে পারবেন। সেইসাথে এখান থেকে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় মূল দলিল ও নিতে পারবেন।

আরো পড়ুনঃ জমির খাজনা চেক করার উপায়

একজন মানুষ কত বিঘা জমির মালিক হতে পারে?

সত্যি বলতে আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন আছে। আর সে কারণে এই জমি নিয়ে আমাদের বিভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন প্রশ্ন আছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি প্রশ্ন হলো, আমাদের বাংলাদেশে একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ কত বিঘা জমির মালিক হতে পারবে।

তো যদি আপনার অঢেল সম্পদ থাকে। তাহলে আপনি একটা কথা বেশ ভালো করে শুনে রাখুন। সেটি হলো, আমাদের বাংলাদেশে বিদ্যমান ১৯৮৪ সালে ভূমি সংস্করন থেকে বিশেষ একটি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা জমির মালিক হতে পারবে।

এছাড়াও ২০২২ সালে প্রকাশিত হওয়া “ভূমি সংস্কার আইন” -এর মধ্যেও একই কথা বলা হয়েছে। যেখানে ষ্পষ্ট করে উল্লেখ আছে যে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে একজন মানুষ সর্বোচ্চ ৬০ বিঘা জমির মালিকানা হতে পারবে।

তবে এখানে প্রশ্ন হলো যে, কোনো কারণে যদি একজন ব্যক্তির জমির পরিমান ৬০ বিঘা এর বেশি হয়। তাহলে সেই ব্যক্তির অতিরিক্ত জমি গুলোর কি হবে? – তো যদি আপনার জমির পরিমান এর থেকে বেশি হয়। সেক্ষেত্রে আপনাকে সরকার নির্ধারিত ট্যাক্স প্রদান করতে হবে।

বাংলাদেশে জমির দলিল কত প্রকার ও কি কি?

আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে জমির দলিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্টস। আর সেটা আমরা সবাই বেশ ভালো করেই জানি। তবে এই বিষয়টি জানার পাশাপাশি আমাদের আরো একটি বিষয় জেনে নিতে হবে। সেটি হলো, আমাদের দেশের মধ্যে থাকা জমির দলিল গুলোকে মোট কয়টি ভাগে ভাগ করা হয়।

তো যদি আপনি আমাদের বাংলাদেশের জমির দলিল এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আমি আপনাকে বলবো যে, আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকারের দলিল পাওয়া যায়। যেমন, 

  1. সাব কবলা দলিল
  2. দানপত্র দলিল
  3. হেবা দলিল
  4. এওয়াজ দলিল
  5. বন্টনামা দলিল
  6. অসিয়ত নামা দলিল
  7. ইউল দলিল
  8. নাদাবী দলিল
  9. বায়না দলিল
  10. আদালতে সাবকবলা দলিল

মূলত আমাদের বাংলাদেশের মধ্যে বর্তমানে যে সকল জমির দলিল পাওয়া যায়। সেই দলিল গুলো নাম উপরের তালিকা তে উল্লেখ করা হয়েছে। আর আপনার হাতে থাকা জমির দলিল গুলো উক্ত তালিকার যে কোনো একটির আওতায় পড়বে।

বাংলাদেশে কত বছর পর পর জমির রেকর্ড করা হয়?

জমির রেকর্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কেননা, যখন কোনো জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়। তখন সেই তথ্য গুলো জমির রেকর্ড এর মাধ্যমে আপডেট করা হয়। আর এই জমির রেকর্ড নির্দিষ্ট সময় পরপর করা হয়ে থাকে।

তো যদিওবা অন্যান্য দেশ ভেদে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে জমির দলিল এর রেকর্ড করা হয়। তবে আমাদের দেশ এর নিয়ম অনুযায়ী প্রায় ৩০ বছর পর রেকর্ড করা হয়ে থাকে। আর এই ৩০ বছর পর জমির রেকর্ড এর মধ্যে যে সকল সংশোধন বা সংযোজন করার দরকার হয়। সেই কাজ গুলো নির্দিষ্ট সময়ে করা হয়ে থাকে।

সাব কবলা বলতে কি বোঝায়?

আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের জমির দলিল আছে। আর তার মধ্যে একটি হলো, সাব কবলা দলিল। যেখানে নির্দিষ্ট একটি চুক্তিপত্রের মধ্যে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি বা পক্ষের স্বাক্ষর থাকে। আর উক্ত আইনি দলিলকে বলা হয়, সাব কবলা দলিল।

উদাহরন হিসেবে বলা যায় যে, বিভিন্ন ধরনের রিয়েল এস্টেট, বড় ধরনের প্রোপার্টি ক্রয় বিক্রয় কিংবা বিতরন বা স্থানান্তর এর ক্ষেত্রে সাব কবলা দলিল এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো। সেটি হলো, বিক্রয় দলিল কে সাধারনত সাব কবলা দলিল বলা হয়ে থাকে।

জমি কি ধরনের হয়? | জমির প্রকারভেদ কি?

সাধারনত জমি বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে। তবে আমাদের বাংলাদেশ এর পরিপ্রেক্ষিতে জমিকে বেশ কিছু ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন,

  1. পর্বতের জমি
  2. পাহাড়ি জমি
  3. মালভূমির জমি
  4. সমভূমি

মূলত উপরের এই ০৪ টি ভাগে আমাদের দেশের জমি কে বিভক্ত করা হয়। তবে এগুলো ছাড়াও জমির আরো কিছু ক্ষুদ্র রুপ আছে। যেমন, উপত্যাকা, অববাহিকা, গিরিখাত, বাট ইত্যাদি। আর এগুলো হলো জমির প্রকারভেদের অতি ক্ষুদ্র রুপ।

অকৃষি খাস জমি কাকে বলে?

অনেক সময় আমরা অকৃষি খাস জমির নাম শুনতে পাই। তো সেই সময় আমরা বুঝতে পারিনা যে, অকৃষি খাস জমি কাকে বলে। তো যদি আপনি উক্ত বিষয়টি না বুঝে থাকেন। তাহলে শুনুন, আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে যে সকল মেট্রোপলিটন এলাকা, পৌর এলাকা এবং থানা সদর পর্যায়ে যে সকল অঞ্চল আছে।

মূলত এই ধরনের অঞ্চল এর মধ্যে যে সকল কৃষি জমি আছে। সেই জমি গুলো কৃষিজমি হওযার পরও। সে গুলোকে অকৃষি খাস জমি হিসেবে ধরা হয়। তো আমাদের দেশে অকৃষি খাস জমি কাকে বলে, আশা করি সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানতে পেরেছেন।

আমাদের বাংলাদেশে খাস জমির পরিমান কত?

আমরা সকলেই জানি যে, আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে প্রচুর পরিমান খাস জমি আছে। কিন্তুু আপনি কি জানেন, আমাদের দেশের মোট খাস জমির পরিমান কত? -হয়তবা আমরা অনেকেই এই বিষয় টি সম্পর্কে জানিনা। তাহলে শুনন,

তো যদি আপনি ঢাকা ২০২০ থেকে ২০২১ এর অর্থ বছরের হিসেব দেখেন। তাহলে জানতে পারবেন যে, উক্ত অর্থবছরে আমাদের দেশে ভূমিহীন পরিবার এর সংখ্যা প্রায় ০১ লাখ ৪৭ হাজার ৯৭৬ এর মতো। আর বর্তমান সময়ে আমাদের দেশের মধ্যে বন্দোবস্তযোগ্য কৃষি খাস জমির পরিমান হলো, ৪ লাখ ৮৪ হাজার একর।

পরিশেষে আমাদের কিছুকথা

প্রিয় পাঠক, বিভিন্ন সময় যখন আপনাদে জমির দলিল সার্চ করার দরকার হবে। তখন আপনি আসলে কিভাবে আপনার জমির দলিল সার্চ করতে পারবেন। আজকের আর্টিকেলে সেই জমির দলিল সার্চ করার পদ্ধতি গুলো কে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এর পাশাপাশি আজকে আমি জমি সংক্রান্ত এমন সব অজানা তথ্য শেয়ার করেছি। যেগুলো আপনার জেনে নেওয়াটা অতি জরুরী।

তো আমি প্রতিনিয়ত এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য গুলো বিনামূল্যে শেয়ার করি। যদি আপনি সেগুলো সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই ওয়েবসাইটটি কোনও অফিসিয়াল ভিসা বা ভ্রমণ সংস্থা নয় এবং এই সাইটের সমস্ত তথ্য অনলাইন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এবং পসিবল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *