ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির জনক কে | Father of micro and macroeconomics
অর্থনীতি আমাদের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার একটি অপরিহার্য অংশ, যা শুধুমাত্র অর্থের লেনদেনের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং সমাজের বিভিন্ন দিকের বিকাশ ও পরিবর্তনেও গভীর প্রভাব ফেলে। কিন্তু, এই বিস্তৃত ক্ষেত্রের দুটি প্রধান শাখা – ব্যষ্টিক অর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি – কীভাবে প্রবর্তিত হয়েছিল? কে ছিলেন তাদের জনক?
অর্থনীতির এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ শাখার উত্থান এবং তাদের প্রভাবের পেছনে যাঁদের অবদান, তাদের চিন্তা-ভাবনার মূলসূত্র কী ছিল, তা জানার আগ্রহ নিশ্চয়ই অনেকের মাঝে আছে। এই লেখা আপনাকে পরিচিত করবে অর্থনীতির এই দুই শাখার সূচনা ও তাদের প্রবর্তকদের সাথে।
ব্যষ্টিক ও সামষ্টিক অর্থনীতির জনক কে | Father of micro and macroeconomics
অর্থনীতি শব্দটি শুনলে আমাদের মনে হয়, এটি শুধুই টাকা-পয়সার হিসাব নিকাশ। কিন্তু আসলে অর্থনীতি হলো সমাজের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব কিছুর সাথেই জড়িত। অর্থনীতির দুটি প্রধান শাখা হলো ব্যষ্টিক অর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি।
ব্যষ্টিক অর্থনীতির জনক কে?
ব্যষ্টিক অর্থনীতি, যেটি আজকের দিনে আমাদের প্রতিদিনের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের বিশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তার উত্থান এক জটিল পথের ফল। উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত ‘পলিটিকাল ইকোনমি’ নামে পরিচিত থাকলেও, সময়ের সঙ্গে এই ধারণাটি পরিবর্তিত হয়েছে।
নতুন ক্লাসিকাল এবং প্রান্তিকতাবাদী চিন্তাধারার উদ্ভবের পর, প্রফেসর আলফ্রেড মার্শাল, যাকে অনেক সময় ব্যষ্টিক অর্থনীতির জনক বলা হয়, এবং স্ট্যানলি জেভনস-এর সমর্থনে, পুরনো নাম ‘পলিটিকাল ইকোনমি’ একে একে চলে যেতে থাকে।
এর পরিবর্তে ‘ইকোনমিক্স’ শব্দটি প্রতিষ্ঠিত হয় এবং আজ পর্যন্ত এটি বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। যদিও কিছু ক্ষেত্রে দ্বিমত আছে, তবে আধুনিক অর্থনীতির মৌলিক ধারণাগুলো মাইক্রোইকোনমিক্স বা ব্যষ্টিক অর্থনীতির মধ্যে নিহিত। এই পরিবর্তনের মাধ্যমে, অর্থনীতির বিভিন্ন দিক এবং তার কর্মপ্রবাহের বিস্তারিত বিশ্লেষণ আমাদের সামনে আসে, যা আজকের সমাজে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং নীতি নির্ধারণে সহায়ক।
আরো পড়ুনঃ বিএসসি নার্সিং এর বেতন কত | BSc Nursing Salary
সামষ্টিক অর্থনীতির জনক কে?
জন মেনার্ড কেইন্স, একজন ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ, আধুনিক অর্থনীতি ও সরকারী নীতির ক্ষেত্রে বিপ্লবী পরিবর্তন এনেছিলেন। তাঁর তত্ত্ব ও মতামতের মাধ্যমে মৌলিক অর্থনীতি নতুন আঙ্গিকে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি অর্থনৈতিক চক্রের কারণ এবং তা থেকে উত্তরণের উপায় বিশ্লেষণ করেন। কেইন্সের কাজের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতি কেবল এক নতুন পথের দিকে অগ্রসর হয়নি, বরং তিনি প্রমাণ করেন যে সরকারী নীতি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সরকারি নীতি নির্ধারক পর্যন্ত, কেইন্সের দর্শন ছিল অত্যন্ত প্রভাবশালী। তাঁর ধারণাগুলি ২০শতকের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ভিত্তি তৈরি করে, যা আজও প্রাসঙ্গিক। আধুনিক ম্যাক্রোইকোনমিক তত্ত্বের ভিত্তি স্থাপনকারী হিসেবে তিনি এখনও বিশ্বব্যাপী অর্থনীতির বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অমূল্য অবদান রেখে চলেছেন।
আরো পড়ুনঃ বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন
অর্থনীতি কত প্রকার?
অর্থনীতি একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র, যা মানুষের জীবনযাত্রা এবং দেশের আর্থিক অবস্থা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আধুনিক অর্থনীতি দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত যথা, ব্যষ্টিক অর্থনীতি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি। ব্যষ্টিক অর্থনীতি একক ব্যক্তির বা ব্যবসায়ের চাহিদা এবং সরবরাহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। এটি বিশেষভাবে ফোকাস করে, কিভাবে একজন মানুষ বা একটি প্রতিষ্ঠান তাদের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার জন্য সিদ্ধান্ত নেয় এবং কীভাবে বাজারে পণ্য ও সেবার চাহিদা এবং যোগান নির্ধারণ হয়।
অপরদিকে, সামষ্টিক অর্থনীতি একটি দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে। এর মধ্যে জাতীয় আয়, কর্মসংস্থান, মুদ্রানীতি ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে, যা দেশীয় অর্থনীতির বৃহৎ দৃশ্যপট এবং সঠিক নীতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনের জন্য ব্যবহৃত হয়। সামষ্টিক অর্থনীতি দেশের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় সরকারের ভূমিকা নির্ধারণে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ বরিশাল ল কলেজে ভর্তির যোগ্যতা | Barisal Law College
আধুনিক অর্থনীতির জনক কে?
পল অ্যান্থনি স্যামুয়েলসন ছিলেন আধুনিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত একজন প্রখ্যাত মার্কিন অর্থনীতিবিদ। ১৯১৫ সালে জন্ম নেওয়া এই মনীষী ১৯৭০ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, যা তার বিশাল অবদানের স্বীকৃতি। তিনি নতুন যুগের অর্থনৈতিক তত্ত্ব ও ধারণা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তাঁর কাজের মাধ্যমে অর্থনীতি একটি বৈজ্ঞানিক শাখা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়, যেখানে গণনা, গাণিতিক মডেল ও প্রমাণের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
স্যামুয়েলসনের তত্ত্বে বাজারের কার্যক্রম, সরকারি নীতিমালা এবং বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে সম্পর্ক তুলে ধরা হয়। তাঁর বিশ্লেষণমূলক দৃষ্টিভঙ্গি অর্থনীতির নতুন দিক উন্মোচন করেছে, যা আজও শিক্ষার্থীরা এবং গবেষকরা ব্যবহার করে থাকেন। আধুনিক অর্থনীতি সম্পর্কে স্যামুয়েলসনের ধারণাগুলি আজকের বিশ্বে আর্থিক নীতিমালা, বাজার গবেষণা এবং উন্নয়ন কার্যক্রমে গভীর প্রভাব ফেলেছে।