ওয়ার্ক পারমিটে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যাওয়ার সম্পূর্ণ গাইড (স্টেপ বাই স্টেপ)
ওয়ার্ক পারমিটে বাংলাদেশ থেকে কি আমেরিকা যাওয়া যায়? অনেকের মনেই এই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়। আমেরিকায় কাজ করা মানে উন্নত ক্যারিয়ার, ভালো ইনকাম এবং স্থায়ী হওয়ার সুযোগ—তাই এই আগ্রহ স্বাভাবিক। কিন্তু সমস্যা হলো সঠিক তথ্যের অভাব। ইন্টারনেটে অনেক ভুল বা অসম্পূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়, যা অনেককে বিভ্রান্ত করে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা খুব সহজ ভাষায়, অফিসিয়াল তথ্যের ভিত্তিতে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যাওয়ার সম্পূর্ণ প্রসেস বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব। কোন ভিসা লাগবে, কিভাবে নিয়োগকর্তা পাওয়া যাবে, কত সময় লাগবে, ইন্টারভিউ কেমন হয়—সব প্রশ্নের উত্তর এখানে পাবেন।
চলুন শুরু করা যাক।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে আমেরিকা যেতে কত সময় লাগে?
আমেরিকায় কাজের জন্য কোন ভিসা লাগবে?
আমেরিকায় কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিট ভিসা দরকার। মূলত দুই ধরনের ভিসা রয়েছে:
- অস্থায়ী (Non-Immigrant) ভিসা – যেমন H-1B ভিসা।
- স্থায়ী (Immigrant) ভিসা – যেমন EB-3 ভিসা।
H-1B ভিসা কী?
- এটি মূলত স্পেশালাইজড পেশার জন্য (আইটি, ইঞ্জিনিয়ারিং, মেডিকেল ইত্যাদি)।
- আবেদন করার জন্য ন্যূনতম Bachelor’s ডিগ্রি থাকতে হবে।
- নিয়োগকর্তা আপনার হয়ে আবেদন করবে।
EB-3 ভিসা কী?
- স্কিলড ও সেমি-স্কিলড কর্মীদের জন্য।
- গ্রিন কার্ড পাওয়ার সুযোগ থাকে।
- এখানে নিয়োগকর্তা PERM Labor Certification করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ আমেরিকার ভিসা পেতে কি কি লাগে?
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় ওয়ার্ক পারমিট পাওয়ার ধাপসমূহ
ধাপ ১: যোগ্যতা যাচাই করুন
প্রথমেই বুঝে নিন কোন ভিসা আপনার জন্য সঠিক।
- প্রফেশনাল চাকরি করতে চাইলে H-1B।
- স্কিলড বা সেমি-স্কিলড চাকরি চাইলে EB-3।
প্রো টিপ: অফিসিয়াল তথ্যের জন্য USCIS ওয়েবসাইট ভিজিট করুন।
ধাপ ২: মার্কিন নিয়োগকর্তা খুঁজুন
আমেরিকায় কাজ করতে হলে আপনাকে একজন স্পনসরিং Employer খুঁজে বের করতে হবে।
- জব পোর্টাল: LinkedIn, Glassdoor, Indeed, USAJobs।
- নিশ্চিত করুন কোম্পানি ভিসা স্পনসরশিপ দেয়।
আরো পড়ুনঃ আমেরিকা b1 b2 ভিসা নিশ্চিত করার কৌশল
ধাপ ৩: নিয়োগকর্তার পিটিশন ফাইলিং
নিয়োগকর্তা আপনার হয়ে পিটিশন জমা দেবে।
H-1B এর জন্য:
- মার্চ মাসে Lottery Registration হয়।
- নির্বাচিত হলে Labor Condition Application (LCA) এবং Form I-129 ফাইল হয়।
EB-3 এর জন্য:
- PERM Labor Certification করতে হয় (৬-৮ মাস)।
- এরপর Form I-140 ফাইল হয় USCIS-এ।
ধাপ ৪: ভিসা আবেদন ও ইন্টারভিউ
- DS-160 ফর্ম পূরণ করতে হবে।
- ফি পরিশোধ করে ইন্টারভিউ স্লট বুক করুন।
- U.S. Embassy Dhaka তে ইন্টারভিউ দিতে হবে।
- ইন্টারভিউতে চাকরি, যোগ্যতা এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে প্রশ্ন করা হয়।
ধাপ ৫: ভিসা অনুমোদন ও যাত্রা শুরু
ভিসা অনুমোদন হলে পাসপোর্টে স্ট্যাম্প দেওয়া হবে। এরপর আপনি আমেরিকা যাত্রা করতে পারবেন।
- আমেরিকায় প্রবেশের সময় CBP অফিসার আপনার তথ্য যাচাই করবে।
- H-1B হলে: ৩ বছর বৈধতা (পরবর্তীতে নবায়নযোগ্য)।
- EB-3 হলে: গ্রিন কার্ড প্রসেস শুরু হবে।
সময় ও খরচ কত?
- H-1B: ৬-৯ মাস সময় লাগে।
- EB-3: প্রায় ১-২ বছর।
- খরচ: সাধারণত নিয়োগকর্তা বড় অংশ বহন করে, তবে মেডিকেল ও ইন্টারভিউ ফি আপনার দিতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ টিপস
✔ সবসময় অফিসিয়াল সোর্স ব্যবহার করুন।
✔ ভিসার জন্য কোনো শর্টকাট নেই—এজেন্টদের প্রলোভনে পড়বেন না।
✔ ডকুমেন্ট সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখুন।
আরো পড়ুনঃ আমেরিকার ট্যুরিস্ট ভিসা কি চালু আছে?
উপসংহার
বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় কাজের জন্য যাওয়া সম্ভব, তবে এটি একটি ধৈর্যের প্রক্রিয়া। সঠিক তথ্য এবং পরিকল্পনা থাকলে আপনার স্বপ্ন পূরণ করা কঠিন কিছু নয়।