মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা

বাংলাদেশি কর্মীদের বৈশ্বিক কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে মালয়েশিয়ার সঙ্গে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজকের এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষাতে তিনি মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনার মোহাম্মদ শুহাদা ওথমানের সঙ্গে আলোচনায় এ প্রস্তাব রাখেন।  

ড. ইউনূস উল্লেখ করেন, মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের দক্ষতা ও শ্রমের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা ব্যবস্থা চালু হলে বাংলাদেশি কর্মীরা সহজে এবং দীর্ঘমেয়াদে মালয়েশিয়ায় কাজ করার সুযোগ পাবে। এটি শুধুমাত্র কর্মীদের সুবিধা নিশ্চিত করবে না, বরং দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ককেও আরও দৃঢ় করবে।  

প্রধান উপদেষ্টার এ আহ্বান সময়োপযোগী ও বাস্তবসম্মত। কারণ, মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা থাকলে কর্মীদের ভ্রমণ প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং তারা বিভিন্ন প্রকল্পে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবে। পাশাপাশি, এ উদ্যোগ বাংলাদেশি কর্মীদের বৈদেশিক আয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।  

১৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে ফেরত আসার সুযোগ

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন। এই ভিসা প্রবর্তিত হলে, কর্মীরা তাদের কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য দেশে আসা এবং যাওয়া সহজভাবে করতে পারবেন, যা তাদের জীবনের গতিশীলতা আরও উন্নত করবে। 

মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসার সুবিধা, প্রয়োজন হলে কর্মীরা মালয়েশিয়া যাওয়ার আগে তাদের দেশে ফিরে এসে আবার কাজ শুরু করতে পারবেন।

এছাড়াও, উপদেষ্টা গত বছরের মে মাসে মালয়েশিয়াতে যেতে না পারা ১৮ হাজার বাংলাদেশি কর্মীকে ফেরত আসার সুযোগ দেওয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকারের কাছে অনুরোধ করেছেন। এই সিদ্ধান্তটি বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, যা তাদের কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা এবং জীবনের মান উন্নত করতে সহায়ক হবে। 

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরনের পদক্ষেপ গুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা দেওয়ার প্রস্তাব

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মীদের সুবিধার জন্য মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন বাংলাদেশ হাইকমিশনার শুহাদা। তিনি জানান, এই বিষয়ে বাংলাদেশ এবং মালয়েশিয়ার কর্মকর্তাদের মধ্যে একটি যৌথ কারিগরি কমিটি কাজ করছে। 

গত ৩১ ডিসেম্বর কুয়ালালামপুরে উক্ত কমিটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজন করেছে, যেখানে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এবং কর্মী পাঠানোর বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

এই উদ্যোগের পরবর্তী ধাপ হিসেবে, আগামীকালও উক্ত কমিটির মধ্যে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এর মাধ্যমে, মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া আরও সুসংহত এবং কার্যকর করার লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। 

এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে, যা তাদের মালয়েশিয়ায় দীর্ঘস্থায়ী এবং ধারাবাহিক কাজের সুযোগ তৈরি করবে।

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকায় সফর

গত বছরের অক্টোবর মাসে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ঢাকায় সফর করেন, যা বাংলাদেশের মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের এক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এই সফরের পর, প্রধান উপদেষ্টা একটি গুরুত্বপূর্ণ আশা প্রকাশ করেছেন যে, মালয়েশিয়া দ্রুত বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য মাল্টিপল-এন্ট্রি ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। 

এতে করে ভবিষ্যতে আরও বেশি বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়াতে কাজের জন্য যেতে পারবেন, যা দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক আরও শক্তিশালী করবে।

এছাড়া, ২০২৫ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আসিয়ান সম্মেলনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর, বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে। এ সময়, ড. ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে তাদের সহায়তা কামনা করেছেন, বিশেষ করে মালয়েশিয়ার সমর্থন বাংলাদেশের আসিয়ান সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার হিসেবে পূর্ণ সদস্য হওয়ার প্রক্রিয়ায়।

যা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক পরিসরে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হবে। যে দেশটি শুধু কূটনৈতিক সম্পর্কই নয়, বরং ব্যবসা ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্ত খুলে যাবে।

মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের সাথে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা সম্প্রতি মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারের সাথে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। তিনি বাংলাদেশে মালয়েশিয়ান বিনিয়োগ বৃদ্ধি এবং দেশের যুবশক্তিকে কাজে লাগানোর জন্য মালয়েশিয়া থেকে আরও কারখানা স্থানান্তরের জন্য আহ্বান জানান। 

তিনি মালয়েশিয়ার হাইকমিশনারকে জানিয়ে দেন যে, বাংলাদেশ ২০২৫ সালে জাতিসংঘ আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে আসিয়ানের সমর্থন কামনা করছে। এই সম্মেলন বিশ্বব্যাপী রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এবং বাংলাদেশ জাতিসংঘের রেজোলিউশন ৭৯/১৮২ অনুযায়ী এই সমর্থন চায়।

এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টা কুয়ালালামপুরে চতুর্থ দ্বিপাক্ষিক কনসালটেশন (বিসিএম) সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য মালয়েশিয়ার কাছ থেকে একটি সুবিধাজনক তারিখের অপেক্ষায় আছেন। বাংলাদেশ ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের ‘পঞ্চম যৌথ কমিশন’ সভা আয়োজনের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই ওয়েবসাইটটি কোনও অফিসিয়াল ভিসা বা ভ্রমণ সংস্থা নয় এবং এই সাইটের সমস্ত তথ্য অনলাইন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এবং পসিবল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *