বুলগেরিয়া কি সেনজেন?
বুলগেরিয়া ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে সেনজেন জোনের অংশ। সেনজেন জোন হল মোট ২৭ টি ইউরোপীয় দেশের একটি অঞ্চল, যেখানে অভ্যন্তরীণ সীমান্তে পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই ভ্রমণ করা সম্ভব। তাই বর্তমান সময়ে বুলগেরিয়ান নাগরিকরা সেনজেন জোনের অন্যান্য দেশে পাসপোর্ট ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবেন। এর পাশাপাশি সেনজেন জোনের অন্যান্য দেশের নাগরিকরা বুলগেরিয়া তে পাসপোর্ট ছাড়াই ভ্রমণ করতে পারবে।
বুলগেরিয়া সংক্ষিপ্ত পরিচিত
বর্তমান সময়ে এই দেশের সরকারী নাম হলো, বুলগেরিয়া প্রজাতন্ত্র। যার অবস্থান হলো, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, বলকান উপদ্বীপের পূর্ব পার্শ্ব। বুলগেরিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ হিসেবে রয়েছে, পূর্বে কৃষ্ণ সাগর, দক্ষিণে গ্রিস ও তুরস্ক, পশ্চিমে সার্বিয়া, মন্টিনেগ্রো, ম্যাসিডোনিয়া এবং উত্তরে রোমানিয়া।
বুলগেরিয়ার রাজধানীর নাম হলো, সোফিয়া। যাকে এই দেশের বৃহত্তম শহরও হিসেবে ধরা হয়। এই দেশের সরকারি ভাষার নাম হলো, বুলগেরিয়ান। তবে এই ভাষার পাশাপাশি বুলগেরিয়াতে আরো অনেক ভাষার প্রচলন আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো তুর্কি, আলবেনীয়, আর্মেনীয়, গাগাউজ, গ্রিক, ম্যাসেডোনীয়, রোমানীয় ইত্যাদি।
বুলগেরিয়ার মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮০% খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। যাদের কে বুলগেরিয়ান অর্থোডক্স বলা হয়। আর এই দেশে প্রায় ইসলাম ধর্মের অনুসারীরর পরিমান ১২%. বর্তমান সময়ে বুলগেরিয়া সেনজেন জোনে অন্তর্ভূক্ত আছে।
বুলগেরিয়া কখন সেনজেন ভুক্ত হয়েছিলো?
শেংগেন অঞ্চল ২৭টি ইউরোপীয় দেশের সমন্বয়ে গঠিত একটি অঞ্চল যেখানে পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই ভ্রমণ করা সম্ভব। এই অঞ্চলটি ১৯৮৫ সালে শেংগেন, লুক্সেমবার্গে স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
বর্তমানে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২২টি শেংগেন অঞ্চলের অংশ রয়েছে। তবে শেংগেন অঞ্চলের বাইরে থাকা আরো ৫ টি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র আছে। সেই রাষ্ট্র গুলো হলো, বুলগেরিয়া, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, রোমানিয়া, আয়ারল্যান্ড। আর ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে বুলগেরিয়া আংশিক ভাবে সেনজেনের যুক্ত হবে।
সেনজেন জোন ও বুলগেরিয়া
একটা বিষয় জেনে রাখা দরকার সেটি হলো, সেনজেন জোনে যোগদান করাটা বুলগেরিয়ার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিলো। কারণ এটি বুলগেরিয়ার নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ ও ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি করবে। সেইসাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে একীভূত করণ করে বুলগেরিয়ার অর্থনীতিকে আরও জোরদার করেছে।
এই ঐতিহাসিক পরিবর্তনের ফলে বুলগেরিয়া একটি উন্নত, সমৃদ্ধ এবং আরও সংযুক্ত দেশে পরিণত হয়েছে। তবে সেনজেন ভুক্ত হওয়ার পর বুলগেরিয়ার যে যে প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাবে সেগুলো নিচে দেওয়া হলো। যেমন,
অর্থনৈতিক উন্নয়ন
সেনজেন ভুক্ত হওয়ার কারণে বুলগেরিয়াতে পূর্বের তুলনায় বর্তমানে অনেক বেশি কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যার ফলে এই দেশের নাগরিকদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। যে উন্নয়নের ধারা ভবিষ্যত সময় পর্যন্ত অব্যহত থাকবে।
ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার
সেনজেন জোনে যোগদান করা বুলগেরিয়ার জন্য নতুন এক উন্মুক্ত বাজারের পথ খুলে গিয়েছে। যে বাজারে তাদের দেশের পণ্য ও পরিষেবা সরবরাহ করতে পারবে। যেটি এই দেশের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করবে এবং বুলগেরিয়ার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি করতে সহায়তা করেছে।
ভ্রমণের স্বাধীনতা
বর্তমান সময়ে বুলগেরিয়ান নাগরিকরা পাসপোর্ট ছাড়াই ২৬ টি ইউরোপীয় দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন। কারণ, নিয়ম অনুযায়ী সেনজেন জোনের নাগরিকরা পাসপোর্ট/ভিসা ছাড়াই একে অপরের দেশে ভ্রমন করতে পারবেন। যার ফলে বুলগেরিয়ার পর্যটন শিল্পের উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সম্পূর্ণ বুলগেরিয়া কেন সেনজেন ভুক্ত হতে পারছে না?
বর্তমান সময়ে বুলগেরিয়া আংশিক সেনজেন ভুক্ত। এর কারণ হলো, বুলগেরিয়ার স্থল সীমান্তে পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ এখনও বিদ্যমান। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে তবে তার মধ্যে অন্যতম হলো, দুর্নীতি ও অপরাধ। বুলগেরিয়ায় দুর্নীতি একটি বড় সমস্যা এছাড়াও বুলগেরিয়ায় অপরাধের হারও বেশি। তাই সম্পূর্ণ বুলগেরিয়াকে সেনজেন ভুক্ত করতে হলে বুলগেরিয়ান সরকারকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা
প্রিয় পাঠক, ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে বুলগেরিয়া আংশিক ভাবে সেনজেনের যুক্ত হবে। আর সেই বিষয়টি নিয়ে আজকের আর্টিকেলে বিস্তারিত বলা হয়েছে। ধন্যবাদ, এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।