ক্ষার কাকে বলে? ক্ষারের তালিকা ও সংকেত

ক্ষার হলো এক ধরণের ক্ষারক যার OH- আয়নের ঘনত্ব বেশি এবং pH 7 এর বেশি। আরহেনিয়াসের তত্ত্ব অনুসারে: যে পদার্থ জলে দ্রবীভূত হলে OH- আয়ন তৈরি করে। আর ব্রনস্টেড-লরি তত্ত্ব অনুসারে: যে পদার্থ H+ আয়ন গ্রহণ করতে পারে।

ক্ষার কাকে বলে?

ধাতু বা ধাতুর মতো ক্রিয়াশীল যৌগমূলকের হাইড্রোক্সাইড যৌগ যা পানিতে দ্রবীভূত হলে OH- আয়ন তৈরি করে তাদেরকে ক্ষার বলে। ক্ষার এর বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য আছে সেগুলো হলো, 

  1. ক্ষার অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ এবং পানি তৈরি করে।
  2. ক্ষার দ্রবণ ত্বকের সংস্পর্শে এলে জ্বলন্ত অনুভূতি তৈরি করতে পারে।
  3. ক্ষার দ্রবণ স্পর্শে মসৃণ অনুভূতি দেয়।
  4. ক্ষার দ্রবণের স্বাদ তিক্ত হয়।
  5. ক্ষার জলে দ্রবীভূত হলে OH- আয়ন তৈরি করে। OH- আয়নের ঘনত্ব বেশি হওয়ায় ক্ষার দ্রবণের pH 7 এর বেশি হয়।

ক্ষারের বেশ কিছু উদাহরন হলো, NaOH (সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড), KOH (পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইড), Ca(OH)2 (ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড) ইত্যাদি।

ক্ষারের তালিকা (নাম ও সংকেত)

বিভিন্ন সময় আমাদের ক্ষারের তালিকা জানার দরকার হয়। তো সেইসময় যেন আপনি সহজেই ক্ষারের নাম ও সংকেত জানতে পারেন সেজন্য নিচে একটি টেবিল প্রদান করা হলো। যেখানে বিভিন্ন ধরনের ক্ষার এর নাম ও সংকেত উল্লেখ করা হয়েছে। 

সিরিয়াল

ক্ষারের নাম

ক্ষারের সংকেত

০১

অ্যালুমিনিয়াম

Al

০২

আর্গন

Ar

০৩

বেরিয়াম

Be

০৪

বোরন

B

০৫

ক্যালসিয়াম

Ca

০৬

কার্বন

C

০৭

ক্লোরিন

Cl

০৮

ফ্লোরিন

F

০৯

হেলিয়াম

He

১০

হাইড্রোজেন

H

১১

লিথিয়াম

Li

১২

ম্যাগনেসিয়াম

Mg

১৩

নেওন

Ne

১৪

নাইট্রোজেন

N

১৫

অক্সিজেন

O

১৬

সালফার

S

১৭

ফসফরাস

P

১৮

সোডিয়াম

Na

১৯

সিলিকন

Si

২০

পটাসিয়াম

K

আপনার জানার সুবিধার জন্য উপরের তালিকায় শুধুমাত্র ২০ টি ক্ষারের নাম ও সংকেত শেয়ার করা হয়েছে। তবে এর বাইরে এমন আরো অনেক ক্ষার আছে যেগুলো এই তালিকায় উল্লেখ করা হয়নি।

ক্ষার কত প্রকার ও কি কি?

সাধারনত ক্ষার কে মোট ০৪ টি ভাগে ভাগ করা হয়। আর সেই প্রকারভেদ গুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। যেমন, 

01.দুর্বল ক্ষার

OH⁻ আয়নের ঘনত্ব কম। পানিতে দ্রবীভূত হলে pH 7 এর কাছাকাছি। উদাহরণ: NaHCO₃ (সোডিয়াম বাইকার্বোনেট), Mg(OH)₂ (ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড)

02.লঘু ক্ষার

OH⁻ আয়নের ঘনত্ব দুর্বল ক্ষারের চেয়ে বেশি, কিন্তু সবল ক্ষারের চেয়ে কম। পানিতে দ্রবীভূত হলে pH 7 এর চেয়ে বেশি। উদাহরণ: Ca(OH)₂ (ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইড), NH₄OH (অ্যামোনিয়াম হাইড্রোক্সাইড)

03.সবল ক্ষার

OH⁻ আয়নের ঘনত্ব বেশি। পানিতে দ্রবীভূত হলে pH 12 এর কাছাকাছি। উদাহরণ: NaOH (সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড), KOH (পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইড)

04.গাঢ় ক্ষার

সবল ক্ষারের ঘন দ্রবণ। OH⁻ আয়নের ঘনত্ব খুব বেশি। উদাহরণ: NaOH (সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড) 40%, KOH (পটাসিয়াম হাইড্রোক্সাইড) 50%.

ক্ষার ও ক্ষারকের মধ্যে পার্থক্য

আমাদের মধ্যে অনেক মানুষ আছেন যারা ক্ষার ও ক্ষারক একই বিষয় মনে করেন। তো যারা আসলে এমনটা মনে করেন তাদের ধারনা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ, ক্ষার ও ক্ষারকের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে। আর আপনাকে সেই পার্থক্য জানিয়ে দেওয়ার জন্য নিচে একটি টেবিল শেয়ার করা হলো। যেমন, 

বৈশিষ্ট্য

ক্ষার

ক্ষারক

সংজ্ঞা

OH- আয়ন তৈরি করে

OH- আয়ন তৈরি করে, H+ আয়ন গ্রহণ করে, ইলেকট্রন জোড়া দান করে, H+ আয়ন দান করে OH- আয়ন তৈরি করে

OH- আয়নের ঘনত্ব

বেশি

কম হতে পারে

pH

7 এর বেশি

7 এর বেশি, 7, বা 7 এর কম হতে পারে

উদাহরণ

NaOH, KOH, Ca(OH)2

NaHCO3, NH4OH, CaCO3

ব্যবহার

কাপড় ধোয়া, নদীর দূষণ রোধ, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ

অম্ল নিরপেক্ষ করা, ঔষধ তৈরি, কৃষিক্ষেত্রে

বৈশিষ্ট্য

ক্ষার

ক্ষারক

জলে দ্রবণীয়তা

বেশি দ্রবণীয়

দ্রবণীয়তা পরিবর্তনশীল

বিদ্যুৎ পরিবাহিতা

ভালো বিদ্যুৎ পরিবাহী

দুর্বল বিদ্যুৎ পরিবাহী

ত্বকের সংস্পর্শে

জ্বলন্ত অনুভূতি

জ্বলন্ত অনুভূতি হতে পারে

অম্লের সাথে বিক্রিয়া

লবণ ও পানি তৈরি করে

লবণ ও পানি তৈরি করতে পারে

উৎস

খনিজ, উদ্ভিদ, প্রাণী

খনিজ, উদ্ভিদ, প্রাণী, রাসায়নিক সংশ্লেষণ

ক্ষারের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি?

এতক্ষনের আলোচনা থেকে আমরা ক্ষার কাকে বলে ও ক্ষার ক্ষারকের পার্থক্য সম্পর্কে জানলাম। তো এবার আমাদের ক্ষারের বৈশিষ্ট্য গুলো জানতে হবে। আর আপনার বোঝার সুবিধার জন্য নিচে সহজ করে ক্ষারের বৈশিষ্ট্য গুলো তুলে ধরা হলো। যেমন, 

০১-ক্ষার ক্ষয়কারী

আমরা সবাই জানি যে, ক্ষারের দ্রবণ অনেক জিনিস ক্ষয় করতে পারে। তাই, ক্ষার দ্রবণ ব্যবহারের সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নাহলে হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।

০২-উচ্চ pH মান

এটা সবার জানা বিষয় যে, ক্ষার এর pH মান অনেক বেশি হয়। কারন, ক্ষার দ্রবণের pH মান 7 এর চেয়ে বেশি হয়। আর pH মান 7 হলে দ্রবণ নিরপেক্ষ, 7 এর কম হলে অ্যাসিডীয় এবং 7 এর বেশি হলে ক্ষারীয়।

ক্ষার দ্রবণ তৈরি করার সময়, ক্ষার যৌগ (যেমন NaOH, KOH) জলে দ্রবীভূত হয় এবং H+ এবং OH- আয়নে বিভক্ত হয়। OH- আয়ন হলো ঋণাত্মক আধানযুক্ত আয়ন যা H+ আয়নের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে থাকে।

০৩-ক্ষার বিদ্যুৎ পরিবাহী

ক্ষারের মধ্যে OH- আয়ন থাকে। আর এই OH- আয়ন এর কারণে ক্ষারের দ্রবন বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়। ক্ষার দ্রবণ তৈরি করার সময়, ক্ষার যৌগ (যেমন NaOH, KOH) জলে দ্রবীভূত হয় এবং H+ এবং OH- আয়নে বিভক্ত হয়। OH- আয়ন হলো ঋণাত্মক আধানযুক্ত আয়ন যা বিদ্যুৎ পরিবহনের অন্যতম কারণ।

০৪-সাবান তৈরি

প্রথমে, তেল এবং ক্ষারকে একসাথে মিশ্রিত করা হয় তারপর, মিশ্রণটিকে উত্তপ্ত করা হয়। উত্তপ্ত করার সময় তেল এবং ক্ষার বিক্রিয়া করে সাবান এবং গ্লিসারিন তৈরি করে। আর সাবান জলে দ্রবণীয় এবং গ্লিসারিন জলে অদ্রবণীয় হওয়ার কারণে খুব সহজে সাবান এবং গ্লিসারিনকে আলাদা করা যায়।

০৫-হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি 

কিছু ক্ষার ধাতুর সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন গ্যাস তৈরি করে। সেই হাইড্রোজেন গ্যাস উৎপাদনকারী সাধারণ বিক্রিয়া সূত্রটি হলো, ক্ষার ধাতু + জল → লবণ + হাইড্রোজেন গ্যাস।

০৬-লবণ ও পানি তৈরি

ক্ষার অ্যাসিডের সাথে বিক্রিয়া করে লবণ ও পানি তৈরি করে। যে বিক্রিয়াটি কে নিরপেক্ষীকরণ বিক্রিয়া বলা হয়। উক্ত বিক্রিয়ার সূত্র হলো, অ্যাসিড + ক্ষার → লবণ + পানি।

০৭-কটু স্বাদ

ক্ষার দ্রবণের স্বাদ কটু হয় কারণ এগুলিতে OH- আয়ন থাকে। আর OH- আয়ন জিহ্বার উপস্থিত রিসেপ্টর গুলোর সাথে বিক্রিয়া করে কটু স্বাদ অনুভব করায়। তবে মনে রাখবেন, সকল ক্ষার দ্রবণ খাওয়া উচিত নয়। কারণ এগুলো বিষাক্ত হতে পারে। 

০৮-পিচ্ছিল অনুভব

বেশিরভাগ ক্ষার দ্রবণ স্পর্শে পিচ্ছিল অনুভূত হয়। এর কারণ হলো ক্ষার দ্রবণ OH- আয়ন ধারণ করে। OH- আয়ন জলের সাথে বিক্রিয়া করে সাবানের মতো পদার্থ তৈরি করে, যা ত্বককে পিচ্ছিল করে তোলে।

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলে আমি আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ক্ষারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। এছাড়াও ক্ষার কাকে বলে, ক্ষার ও ক্ষারকের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরেছি। আমার দীর্ঘ বিশ্বাস যে আজকের শেয়ার করা তথ্য গুলো আপনার জন্য অনেক হেল্পফুল হবে। 

আর আমরা প্রতিনিয়ত এমন হেল্পফুল তথ্য গুলো এই ওয়েবসাইটে পাবলিশ করি। যদি আপনি সেই অজানা তথ্য গুলো সহজ ভাবে জানতে চান তাহলে নিয়মিত আমাদের ওয়েবসাইটে ভিজিট করবেন। ধন্যবাদ, এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই ওয়েবসাইটটি কোনও অফিসিয়াল ভিসা বা ভ্রমণ সংস্থা নয় এবং এই সাইটের সমস্ত তথ্য অনলাইন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এবং পসিবল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *