ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করার সহজ উপায়
Voter ID Card Checking: একজন বাংলাদেশ এর নাগরিক হয়ে একটা কথা আপনার অবশ্যই জানা থাকবে। সেটি হলো, ভোটার আইডি কার্ড আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্টস। আর এই গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টস টি যাচাই করা আমাদের একান্ত জরুরী একটি বিষয়। যার মাধ্যমে আপনার নিকট থাকা ভোটার আইডি কার্ডটি আসল নাকি নকল। তা আপনি ভোটার আইডি কার্ড চেকিং এর মাধ্যমে জানতে পারবেন।
আর আপনি আসলে কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করবেন। সেই পদ্ধতি গুলোকে সহজ ভাবে তুলে ধরার জন্যই, আজকের এই আর্টিকেল টি লেখা হয়েছে। তো চলুন সরাসরি মূল আলোচনা তে ফিরে যাওয়া যাক।
ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করতে কি কি দরকার হয়?
বর্তমান সময়ে আপনি যদি আপনার নিজস্ব ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করতে চান। তাহলে আপনার নিকট বেশ কিছু তথ্য থাকতে হবে। আর সেই তথ্য গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, আপনার ভোটার আইডি কার্ডের নম্বর এবং আপনার আসল জন্ম তারিখ জানতে হবে।
তবে এগুলোর পাশাপাশি আপনার একটি সচল মোবাইল নম্বর এর দরকার হবে। এছাড়াও নিজের ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করতে হলে ফেস ভেরিফিকেশন করতে হয়। সেজন্য আপনার নিকট একটি এন্ড্রয়েড স্মার্টফোনের প্রয়োজন হবে। যার সাহায্য আপনি আপনার ফেস ভেরিফিকেশন করতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ টোকেন দিয়ে আইডি কার্ড বের করার নিয়ম
আপনি কেন ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করবেন?
বিভিন্ন প্রয়োজনে আমাদের ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করার দরকার হয়। যেমন ধরুন, প্রযুক্তির উন্নতির ফলে বর্তমান সময়ে হুবহু ভোটার আইডি কার্ডের মতো নকল আইডি কার্ড তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু নকল আইডি কার্ড এর মধ্যে থাকা তথ্য গুলো নির্বাচন কমিশন অফিসের ডেটাবেজে খুজে পাওয়া যাবে না। কেননা নির্বাচন কমিশন এর কাছে শুধুমাত্র বৈধ ভোটার আইডি কার্ডের তথ্য গুলো জমা থাকে।
মূলত ভোটার আইডি কার্ড চেক করার অন্যতম কারণ হলো, আপনার নিকট যে আইডি কার্ডটি রয়েছে। সেটি আসলে নকল নাকি সেটি আসল, তা যাচাই করা। আর আপনিও যদি আপনার ভোটার আইডি কার্ড যাচাই করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনাকেও নিচে দেখানো পদ্ধতি মেনে সেটি চেকিং করে নিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ড জন্ম তারিখ সংশোধন ফরম
কিভাবে ভোটার আইডি কার্ড চেক করা যায়?
বর্তমান সময়ে মোট দুই (০২) টি পদ্ধতি রয়েছে। যে পদ্ধতি গুলোর মাধ্যমে আপনি ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করে নিতে পারবেন। আর সেই পদ্ধতি গুলো হলো,
- সরাসরি নির্বাচন কমিশন এর মূল ওয়েবসাইট থেকে
- ভূমি মন্ত্রণালয় এর ওয়েবসাইট থেকে
তো আপনি যদি আপনার নিজের ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনি নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ফেস ভেরিফিকেশন এর মাধ্যমে ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি অন্য কোন ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনি ভূমি মন্ত্রণালয় এর ওয়েবসাইট থেকে তা যাচাই করে নেওয়ার চেষ্টা করবেন।
আরো পড়ুনঃ ভোটার আইডি কার্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করার নিয়ম
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ভোটার আইডি কার্ড চেক
আমি উপরেই আপনাকে বলে দিয়েছি যে, আপনি যদি আপনার নিজের ভোটার আইডি কার্ড চেক করতে চান। তাহলে অবশ্যই আপনি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন এর ওয়েবসাইট থেকে তা যাচাই করার চেষ্টা করবেন। কেননা এই ওয়েবসাইট থেকে ভোটার আইডি কার্ড যাচাই করার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ সহ ফেস ভেরিফিকেশন করার দরকার পড়ে।
কিন্তু আপনি যদি অন্য কোন ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ড যাচাই করতে চান। এবং সেই ব্যক্তি যদি আপনার নিকটে থাকে। তাহলেও আপনি এই ওয়েবসাইট থেকে তার ভোটার আইডি কার্ড যাচাই করে নিতে পারবেন। তবে উক্ত ওয়েবসাইট থেকে ভোটার আইডি কার্ড যাচাই করার জন্য যে সকল পদ্ধতি অনুসরণ করার প্রয়োজন পড়বে। সেগুলো নিচে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেওয়া হলো।
ধাপ-১ঃ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন
যেহেতু আপনি নির্বাচন কমিশন এর ওয়েবসাইট থেকে আপনার ভোটার কার্ড চেকিং করতে চান। সেহেতু অবশ্যই আপনাকে তাদের মূল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে।
আর আপনি চাইলে এখানে ক্লিক করে সরাসরি তাদের ওয়েবসাইট এর মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন। তো যখন আপনি উপরের লিংকের মধ্যে ক্লিক করবেন। তখন আপনি ঠিক নিচের পিকচারের মত একটি ওয়েবসাইটে প্রবেশ করবেন।
ধাপ-২ঃ একাউন্ট রেজিস্টার করুন
এখন উক্ত ওয়েবসাইটের মধ্যে যদি আপনার আগে থেকেই একাউন্ট করা থাকে। তাহলে আপনি সেই একাউন্টের ইমেইল ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে পারবেন।
কিন্তু যদি আপনার আগে থেকে একাউন্ট করা না থাকে। তাহলে আপনি ”রেজিস্টার করুন” নামক বাটন এর মধ্যে ক্লিক করে, নতুন একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নিতে হবে। আর আপনি যখন রেজিস্টার করুন নামক বাটন এর মধ্যে ক্লিক করবেন। তখন আপনি নিচের পিকচারের মত একটি পেজে প্রবেশ করবেন।
তো এখানে আপনাকে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর, জন্ম তারিখ এবং ক্যাপচা কোড সঠিক ভাবে প্রদান করার পর ”সাবমিট” নামক বাটন এর মধ্যে ক্লিক করতে হবে।
ধাপ-৩ঃ ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার প্রদান করুন
সাবমিট নামক বাটন এর মধ্যে ক্লিক করার পরে আপনাকে আপনার ঠিকানা উল্লেখ করতে হবে। আর এখানে অবশ্যই আপনি নির্ভুল ভাবে আপনার বিভাগের নাম, জেলা, উপজেলা ইত্যাদি তথ্য গুলো সঠিক ভাবে সিলেক্ট করবেন।
এবং তারপরে আপনাকে আপনার একটি সচল মোবাইল নম্বর দিতে হবে। কেননা এখানে দেওয়া মোবাইল নম্বরে একটি ভেরিফিকেশন কোড যাবে। এবং সেই কোড টি দিয়ে আপনাকে ভেরিফাই করে নিতে হবে।
ধাপ-৪ঃ আপনার ফেস ভেরিফিকেশন করুন
যখন আপনি উপরের ধাপ গুলো সঠিক ভাবে সম্পন্ন করবেন। তারপর সর্বশেষ ধাপে আপনার সামনে একটি কিউআর কোড আসবে। তো আপনি এই পেজটি কে একবারই ক্লোজ করে দিবেন না। বরং এবার আপনাকে ফেস ভেরিফিকেশন এর কাজ করতে হবে। সেজন্য আপনি আপনার অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল টি হাতে নিন। এবং সরাসরি গুগল প্লে স্টোর এর মধ্যে প্রবেশ করুন।
আর যখন আপনি google play store এর মধ্যে প্রবেশ করবেন। তারপর সার্চ অপশনে গিয়ে ”NID Wallet App” লিখে সার্চ করবেন। এবার প্রথমে যে অ্যাপ্লিকেশন টি আসবে, সেটি আপনার মোবাইলে ইন্সটল করে ওপেন করুন।
এরপরে সেই এপ্লিকেশনের মধ্যে প্রবেশ করার পরে, আপনাকে ভাষা সিলেক্ট করতে হবে। এবং উক্ত অ্যাপ্লিকেশন এর মধ্যে থাকা টার্মস এন্ড কিন্ডশনে “ Agree and Continue” এর মধ্যে টিক মার্ক দিতে হবে।
তারপর এই অ্যাপ্লিকেশন এর মধ্যে কিউআর কোড স্ক্যান করার একটি অপশন চলে আসবে। তো এবার আপনি নতুন এখন একাউন্ট তৈরি করার সময় যে কিউআর কোডটি দেখতে পাচ্ছেন। সেই কোড টি আপনার মোবাইলের অ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমে স্ক্যান করুন। তারপর আপনি উক্ত অ্যাপ্লিকেশন থেকে ফেস ভেরিফিকেশন করতে পারবেন।
ধাপ-৫ঃ আপনার ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করুন
যখন আপনি ফেস ভেরিফিকেশন এর প্রক্রিয়া শেষ করবেন। তারপরে আপনাকে একটি পাসওয়ার্ড সিলেক্ট করতে হবে। এবং সেই পাসওয়ার্ড ও ইউজার আইডি দিয়ে আপনাকে লগইন করতে হবে।
আর লগইন করার পরে আপনি সবার ডান পাশে থাকা ”প্রোফাইল” নামক একটি অপশন দেখতে পারবেন। সেই অপশনের মধ্যে ক্লিক করার পরে আপনি আপনার কাঙ্খিত ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ নতুন ভোটার আইডি কার্ড করার নিয়ম ২০২৩
ভূমি মন্ত্রণালয় ওয়েবসাইট থেকে ভোটার আইডি কার্ড চেক
উপরে আপনি যে, ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করার পদ্ধতি দেখতে পাচ্ছেন। সেটি মূলত আপনার নিজের ভোটার আইডি কার্ড কিংবা আপনার নিকটে থাকা ব্যক্তিদের ভোটার আইডি কার্ড চেক করার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যাবে।
তবে আপনি যদি অন্য কোন ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করতে চান। যে ব্যক্তি টি বর্তমান সময়ে আপনার থেকে অনেক দূরে রয়েছে। তাহলে আপনাকে নিচের পদ্ধতি গুলো ফলো করতে হবে। যেমন,
- সবার প্রথমে আপনাকে এখানে ক্লিক করতে হবে।
- তারপর আপনি উপরের পিকচার এর মত একটি ওয়েবসাইটের মধ্যে প্রবেশ করবেন।
- তো এবার একটু নিচের দিকে স্ক্রল করলেই আপনি ”নাগরিক নিবন্ধন” নামের একটি অপশন দেখতে পারবেন।
- তার নিচে ”মোবাইল নম্বর” দেওয়ার অপশনে আপনি আপনার পছন্দ মত একটি মোবাইল নাম্বার প্রদান করুন।
- তারপর আপনি সেই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্রের নম্বর প্রদান করুন। যে ব্যক্তির ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করতে চান।
- এরপর সেই ভোটার আইডি কার্ডের মধ্যে থাকা জন্ম তারিখ সঠিক ভাবে প্রদান করুন।
- সবশেষে ”পরবর্তী পদক্ষেপ” নামক বাটনের মধ্যে ক্লিক করুন।
যখন আপনি এই পদ্ধতি অনুসরণ করবেন। তখন আপনি শুধুমাত্র ভোটার আইডি নম্বর এর ব্যক্তির নাম এবং ঠিকানা সম্পর্কে জানতে পারবেন। তবে আগের দিন গুলো তে এই পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট একজন ব্যক্তির ছবি সহ দেখার সুযোগ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এই সুযোগ টি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
আপনার জন্য কিছুকথা
আপনারা যারা ভোটার আইডি কার্ড চেকিং করতে চান। তারা আসলে কিভাবে সেই কার্ড চেকিং করবেন। তার সকল পদ্ধতিগুলো আজকে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। আশা করি, আজকের পদ্ধতি গুলো বুঝতে আপনার কোনো ধরনের সমস্যা হবেনা। তবে এরপরও যদি কোনো সমস্যা হয়, তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।
আর ভোটার আইডি কার্ড সম্পর্কে সকল আপডেট তথ্য গুলো জানতে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।