মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর জানা অজানা ইতিহাস
The unknown history of the United States: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যাকে আমরা আমেরিকা নামেও চিনি। আর এই দেশটির ইংরেজি নাম হলো, United States of America. এটি একটি সাংবিধানিক প্রজাতন্ত্র যা মূলত পঞ্চাশটি অঙ্গরাজ্য, একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় জেলা ও পাঁচটি টেরিটোরি এবং কিছু মাইনর আউটলেয়িং দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে গঠিত।
আর আজকের এই গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল এর মাধ্যমে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানবো। তো যদি আপনি সেই বিষয় গুলো জানতে চান। তাহলে নিচের আলোচিত আলোচনা গুলোতে চোখ রাখুন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কাকে বলে?
বর্তমান বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম দেশের নাম হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তবে আয়তনের দিক থেকে তৃতীয় বৃহত্তম দেশ হলেও জনসংখ্যার দিক থেকে এই দেশটির অবস্থান রয়েছে চতুর্থ পর্যায়ে। কেননা, বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যার পরিমান হলো ৩৩ কোটি ৬৭ লাখ (প্রায়)।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আমেরিকার উত্তর পূূর্বে অবস্থিত একটি দেশ। যে দেশের রাজধানীর নাম হলো, ওয়াশিংটন ডিসি। আর বর্তমান সময়ে এই দেশের বৃহত্তম শহরের নাম হলো, নিউ ইয়র্ক।
বলে রাখা ভালো যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হলো একটি গনতান্ত্রিক দেশ। যে দেশটিকে সঠিক ভাবে পরিচালনা করার জন্য সরকারের মোট ০৩ টি শাখা আছে। যেগুলো হলো, বিচার, আইনসভা এবং নির্বাহী। আর আমরা সবাই জানি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব অর্থনীতি ও বিশ্ব রাজনীতি তে ব্যাপক পরিমান ভূমিকা রাখে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন বলা হয়?
আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যারা আসলে জানতে চায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন বলা হয়। তো এই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলার পেছনে বেশ কিছু কারন আছে। যেগুলো নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।
আমরা জানি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মূলত উত্তর আমেরিকার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত একটি দেশ। যা প্রায় ৫০ টি রাজ্য এবং একটি ফেডারেল জেলার সমন্বয়ে গঠিত। প্রায় ১৭৭৬ সালে মোট ১৩ টি রাজ্য ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীনতা ঘোষনা করে। তার পরবর্তী সময়ে অর্থ্যাৎ ১৭৮৩ সালে উক্ত রাজ্য গুলো স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ী হয়।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নামের মধ্যে যে “মার্কিন” শব্দটি আছে। সেটি মূলত “আমেরিকা” শব্দ থেকে এসেছে। যা আমরা আমেরিকা মহাদেশ হিসেবে চিনি। আর অতিতের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, প্রায় ১৫শ শতাব্দির দিকে আমেরিগো ভেসপুচি নামক একজন ব্যক্তি ছিলেন।
তিনি মূলত এই মহাদেশটির অন্বেষন করেছিলেন। আর সে কারণে উক্ত ইতালিয়ান অভিযাত্রী আমেরিগো ভেসপুচির নামে আমেরিকা নামটির উদ্ভব হয়।
আর যুক্তরাষ্ট্র শব্দের অর্থ হলো, একত্রিত রাজ্য। যেহুতু এই দেশটি মোট ৫০ টি রাজ্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে। যার কারণে এই দেশের নামের সাথে যুক্তরাষ্ট্র শব্দটির ব্যবহার করা হয়েছে। তবে ১৯৭১ সালে এই দেশটির নাম “একত্রিত উত্তর আমেরিকা রাজ্যসমূহ” হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিলো। কিন্তুু পরবর্তী সময়ে ১৭৮৭ সালে এই দেশটির নাম “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র” হিসেবে সাংবিধানিক পরিচিতি লাভ করে।
আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্র কি একই?
বিভিন্ন সময় আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে, আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্র একই কি না। তো যদি আপনি অর্থগত দিক থেকে চিন্তা করে দেখেন। তাহলে বলবো যে, আমেরিকা ও যুক্তরাষ্ট্র একই। কিন্তুু এখানে একটা বিষয় আমাদের লক্ষ্য করতে হবে।
সেটি হলো, আমেরিকা হলো বৃহৎ একটি মহাদেশ, যা প্রায় দুইটি অংশে বিভক্ত। আর এই বিভক্ত হওয়া মহাদেশ গুলোর মধ্যে একটি হলো, উত্তর আমেরিকা ও আরেকটি হলো, দক্ষিন আমেরিকা। আর উত্তর আমেরিকার যে অংশ আছে। মূলত তাকে ইংরেজিতে বলা হয়, United States of America. যে দেশটির রাজধানীর নাম হলো, ওয়াশিংটন ডিসি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভার নাম কি?
বিশ্বের প্রায় প্রতিটা দেশের মধ্যে নিজস্ব আইনসভা আছে। আর যেহুতু আমরা আজকের আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে আলোচনা করছি। সেহুতু আমাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা নিয়েও বিস্তারিত জেনে নেওয়া দরকার।
তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে আইনসভা আছে, সেই আইনসভার নাম হলো, কংগ্রেস। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে থাকা কংগ্রেসের মধ্যে প্রায় দুইটি অংশ নিয়ে বিভক্ত। সেগুলো হলো, সিনেট এবং হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস।
আর সিনেট নামক যে অংশটি আছে, সেই অংশে মূলত ১০০ জনের মতো সদস্য আছে। অর্থ্যাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে মোট ৫০ টি রাজ্য আছে। তার প্রত্যেকটি রাজ্যের মধ্যে মোট ০২ জন করে সদস্য যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে হাউস অফ রিপ্রেজেন্টিটিভ এর মোট সদস্য সংখ্যা হলো প্রায় ৪৩৫ জন। আর এই সদস্য গুলো মূলত জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে নির্বাচন করা হয়। তবে কংগ্রেসের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রনয়ন, বাজেট অনুমোদন করা, আন্তর্জাতিক চুক্তির অনুমোদন করা থেকে। রাষ্ট্রপতি অপরসারন করার ক্ষমতাও রয়েছে।
আর আমরা সকলেই জানি যে, বর্তমান সময়ে কংগ্রেসের মূল সদর দপ্তর ওয়াশিংটন ডিসি তে অবস্থিত রয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের নাম কি?
বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সর্বোচ্চ আদালত আছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালতের নাম হলো, সুপ্রিম কোর্ট। তো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে সুপ্রিম কোর্ট আছে, সেখানে মূলত একজন প্রধান বিচারপতি আছেন। আর প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি আরো ০৮ জন সহকারী বিচারপতি আছেন।
তবে সুপ্রিম কোর্টের মধ্যে যে সকল বিচারপতি আছেন। তারা মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে মনোনীত হন। এর পাশাপাশি সেই বিচারপতি গুলো সিনেট কর্তৃক অনুমোদিত হয়ে থাকেন।
আর বর্তমান সময়ের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের যেসকল ক্ষমতা আছে। সেই ক্ষমতা গুলোর তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন,
- যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে থাকা সংবিধানের ব্যাখা করা।
- যুক্তরাষ্ট্রের প্রদত্ত আইনের বৈধতা নির্ণয় করা।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে থাকা রাজ্য গুলোর বিরোধ নিষ্পত্তি করা।
- ফেডারেল সরকার ও রাজ্য সরকারের ক্ষমতা বল্টন করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের যেসকল ক্ষমতা রয়েছে। সেই ক্ষমতা গুলোর উপরের তালিকায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট সম্পর্কে আরো কিছু অজানা তথ্য শেয়ার করা দরকার।
যেমন, সুপ্রিম কোর্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইন ব্যবস্থার উপর যথেষ্ট শক্তিশালী প্রভাব ফেলে থাকে। আর এই সুপ্রিম কোর্ট থেকে যেসকল আইন পাস করা হয়। সেগুলো সম্পূর্ণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রয়োগ করা হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর নাম কি?
বিশ্বের প্রায় প্রতিটা স্বাধীন দেশের একটি করে রাজধানী আছে। আর যেহুতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বৃহত্তর দেশ। সেহুতু এই দেশেরও একটি রাজধানী আছে। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর নাম হলো, ওয়াশিংটন ডিসি।
মূলত এই ওয়াশিংটন ডিসি হলো একটি ফেডারেল জেলা। আর এই ফেডারেল জেলা শব্দটি নির্দিষ্ট একটি অর্থ বহন করে। সেটি হলো, ওয়াশিংটন ডিসি কোনো রাজ্যের অংশ নয়। কেননা, এটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেন্দ্রস্থল।
আর এই রাজধানী শহরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ভবন গুলোর অবস্থান রয়েছে। যেমন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি তে রাষ্ট্রপতির বাসভবন হোয়াইট হাউস এর অবস্থান রয়েছে।
এর পাশাপাশি মার্কিন কংগ্রেস এর কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট সহো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য সরকারি ভবন গুলো ওয়াশিংটন ডিসির মধ্যে অবস্থিত রয়েছে।
কিভাবে ওয়াশিংটন ডি.সির নামকরন করা হয়েছিলো?
উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর নাম হলো ওয়াশিংটন ডিসি। তবে এই ওয়াশিংটন ডি.সির নামকরন এর পেছনে রয়েছে অনেক ইতিহাস। আর এবার আমি আপনাকে ওয়াশিংটন ডিসির নামকরন এর ইতিহাস সম্পর্কে বলবো।
সাধারনত ওয়াশিংটন ডি,সি এর নামকরন করা হয়েছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতির নাম অনুসারে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম রাষ্ট্রপতির নাম ছিলো জর্জ ওয়াশিংটন। আর তার নাম অনুসারে ১৮০০ সালে ওয়াশিংটন ডি.সি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়েছিলো।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন ধরনের অর্থনীতি?
বিশ্বের উন্নত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে অন্যান্য বিষয় জানার পাশপাশি আমাদের আরো একটি বিষয় জানতে হবে। সেটি হলো, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন ধরনের অর্থনীতি।
তো বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে যে অর্থনীতি চলমান আছে। সেই অর্থনীতি কে বলা হয়, মিশ্র অর্থনীতি। আর আমরা সকলে জানি যে, মিশ্র অর্থনীতির মানে এমন বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন অর্থনীতিকে বোঝানো হয়। যে দেশের মধ্যে বাজার শক্তি ও সরকার নিয়ন্ত্রন উভয়ের কার্যকলাপ এর প্রভাব থাকে।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে থাকা নির্বাচিত সরকার সর্বদাই সেই দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলে। কেননা, সেই দেশের সরকার শিক্ষা থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ সহো আরো অনান্য ক্ষেত্র গুলোতে ব্যয় করে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ইতিহাস
তো আমরা যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ইতিহাস সম্পর্কে জানতে চাই। তাহলে আমাদের কয়েক ধাপে সেই ইতিহাস জানতে হবে। কেননা, ১৬০৭ সালের ঔপনিবেশিক যুগ থেকে শুরু করে বর্তমান সময়ে পর্যন্ত অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আজকের এই অবস্থানে এসে পৌঁছাতে পেরেছে। যার সঠিক ইতিহাস নিচের আলোচনায় তুলে ধরা হলো। যেমন,
১৬০৭ – ১৭৭৬ সাল (ঔপেনিবেশিক যুগ)
এই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল অর্থনীতি হিসেবে কৃষিনির্ভর ছিলো। তবে কৃষি কাজের পাশাপাশি এই দেশটি বিভিন্ন ধরনের বানিজ্যর উপরেও নির্ভর করতো। কেননা, সেই সময়ের মানুষ বিভিন্ন ধরনের পন্য উৎপাদন করতো। আর সেই পন্য গুলোর মাধ্যমে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সাথে বানিজ্য করতো।
১৭৭৬ – ১৮৬৫ সাল (স্বাধীনতার যুগ)
যখন ১৭৭৬ সাল চলছিলো, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির মধ্যে শিল্পের উন্নয়ন হওয়া শুরু হয়। মূলত উক্ত সময়ে এই দেশের মধ্যে শিল্পের বিপ্লব হওয়া শুরু হয়। আবিস্কার করা হয় নতুন নতুন প্রযুক্তি, যার ফলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠানের।
১৮৬১ – ১৮৬৫ সাল (অভ্যন্তরীন যুগ)
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন যুগের সময় অর্থনীতি ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত হয়েছিলো। কেননা, যুদ্ধের পর এই দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হওয়া শুরু হয়। সেইসাথে তাদের অর্থনীতি আরো দ্রুত প্রসার হতে শুরু করেছিলো।
১৯১৪ -১৯১৮ সাল (প্রথম বিশ্বযুদ্ধের যুগ)
যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় চলছিলো, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আরো বৃহৎ আকারে আবির্ভুত হয়েছিলো। কেননা, সেই সময় ইউরোপের সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করেছিলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
১৯২০ – ১৯৩৯ সাল (মহামন্দার যুগ)
যেহুতু এই সময়টা মহা মন্দার সময় ছিলো। সেহুতু এটা সহজেই অনুমান করা যায় যে, এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি একবারে ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিলো। কেননা, সেই সময়ে এই দেশের মধ্যে ব্যাপক বেকারত্ব দেখা দিয়েছিলো।
এছাড়াও পূর্বের সময় গুলোতে যেসব নতুন নতুন শিল্প কারখানা তৈরি হয়েছিলো। সেগুলোর অধিকাংশ এই মন্দার সময় বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। যার ফলে এই মহামন্দার যুগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অনেকটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিলো।
১৯৩৯ – ১৯৪৫ সাল (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুগ)
অবাক করার মতো বিষয় হলো, যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি পুনরায় শক্তিশালী হয়ে উঠেছিলো। আর সে কারণে উক্ত সময়ে সেই দেশটি প্রধান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলো। যার কারণে তারা ইউরোপ ও এশিয়ার মিত্রদের জন্য অস্ত্র সরবরাহের জন্য সাহায্য করতো।
১৯৪৫ – বর্তমান সময়
বর্তমান সময়ে আমরা তো নিজেই দেখতে পারছি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি কতটা উন্নতি করতে পেরেছে। কেননা, চলমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের মধ্যে বহত্তম অর্থনীতির দেশ হিসেবে পরিনত হয়েছে।
তো উপরের আলোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির ইতিহাস কে ধাপে ধাপে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করি, এই আলোচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি সম্পর্কে আপনার পরিস্কার ধারনা চলে এসেছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য কয়টি ও কি কি?
অনেক সময় আমাদের জানার প্রয়োজন হয় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য কয়টি ও কি কি। তো আমরা সকলেই জানি যে, বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মোট ৫০ টি অঙ্গরাজ্য আছে। আর সেই অঙ্গরাজ্য গুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন,
- সাউথ ক্যারোলাইনা
- সাউথ ডাকোটা
- টেনেসী
- টেক্সাস
- ইউটা
- ভার্মন্ট
- ভার্জিনিয়া
- ওয়াশিংটন
- ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া
- উইসকনসিন
- ওয়াইয়োমিং
- নেব্রাস্কা
- নেভাডা
- নিউ হ্যাম্প্শায়ার
- নিউ জার্সি
- নিউ মেক্সিকো
- নিউ ইয়র্ক
- নর্থ ক্যারোলাইনা
- নর্থ ডাকোটা
- ওহাইও
- ওকলাহোমা
- অরেগন
- পেনসিলভেনিয়া
- রোড আইল্যান্ড
- ইন্ডিয়ানা
- আইওয়া
- ক্যানসাস
- কেন্টাকি
- লুইজিয়ানা
- মেইন
- মেরিল্যান্ড
- ম্যাসাচুসেট্স
- মিশিগান
- মিনেসোটা
- মিসিসিপি
- মিজুরি
- মন্টানা
- আলাবামা
- আলাস্কা
- অ্যারিজোনা
- আর্কানসাস
- ক্যালিফোর্নিয়া
- কলোরাডো
- কানেটিকাট
- ডেলাওয়্যার
- ফ্লোরিডা
- জর্জিয়া
- হাওয়াই
- আইডাহো
- ইলিনয়
উপরের তালিকায় আপনি মোট ৫০ টি অঙ্গরাজ্যের নাম দেখতে পাচ্ছেন। মূলত এই অঙ্গরাজ্য গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থিত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহরের নাম ও বিস্তারিত
এতক্ষণের আলোচনা থেকে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয় জানতে পারলাম। তো সেই বিষয় গুলো জানার পাশাপাশি এবার আমি আপনাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বড় শহর গুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।
অর্থাৎ, বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে শহর গুলো কে বৃহৎ হিসেবে ধরা হয়, সেগুলোর তালিকা নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন,
০১ – নিউ ইয়র্ক সিটিঃ যদি আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শহরের নাম জানতে চান। তাহলে সবার প্রথমে যে নামটি আসবে সেটি হল, নিউ ইয়োর্ক সিটি।
কেননা এই শহরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বৃহত্তর শহর হিসেবে পরিচিত করার পাশাপাশি এই শহরটি জনবহুল হিসেবেও বিখ্যাত। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং আন্তর্জাতিক কেন্দ্র হিসেবে নিউইয়র্ক সিটি হল অন্যতম।
০২ – লস এঞ্জেলসঃ বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হিসেবে পরিচিত হল, লস এঞ্জেলস। এছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য জনবহুল শহর গুলোর মধ্যে লস এঞ্জেল হলো অন্যতম।
আর উক্ত শহরের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র, টেলিভিশন, সঙ্গীত শিল্পের কেন্দ্র গুলো অবস্থিত। যার কারণে পর্যটকদের কাছে এই শহরটি এক অন্যরকম ভূমিকা রাখতে পেরেছে।
০৩ – শিকাগোঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম শহর হল, শিকাগো। বিভিন্ন ধরনের শিল্প ও পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে এই শহরটির ভূমিকা অপরিসীম। তবে শুধুমাত্র শিল্পের দিক থেকেই নয় বরং পর্যটকদের কাছেও এই শহরটি অনেক জনপ্রিয়।
০৪ – ফিলাডেলফিয়াঃ এটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম শহর। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে থাকা অন্যান্য শহর গুলোর তুলনায় ফিলাডেলফিয়া শহর কে সবচেয়ে ঐতিহাসিক শহর হিসেবেই পরিচিত করা হয়।
কেননা এই শহরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। যার কারণে এই শহরটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক শহর হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
০৫ – হিউস্টনঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এটি হলো পঞ্চম বৃহত্তম শহর। যে শহরটি মূলত বিভিন্ন ধরনের শিল্পের জন্য বিখ্যাত। কেননা, বর্তমান সময়ে হিউস্টন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি তেল এবং গ্যাস শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করতে পেরেছে।
০৬ – ডেট্রয়েটঃ বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ষষ্ঠ বৃহত্তম শহর হিসেবে ডেট্রয়েট বিখ্যাত। কেননা, ডেট্রয়েট যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে অটোমোবাইল শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে বিশেষ ভাবে পরিচিত। যেখানে বিভিন্ন ধরনের পন্য উৎপাদন করা হয়ে থাকে।
০৭ – ফোর্ট ওয়ার্থঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম বৃহত্তম শহর এর নাম হলো, ফোর্ট ওয়ার্থ। আর বর্তমান সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তির জন্য এই শহরের জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে সামরিক শক্তির পাশপাশি তেল ও গ্যাস শিল্পের কেন্দ্র হিসেবেও ফোর্ট ওয়ার্থ বিখ্যাত।
০৮ – সান আন্তোনিওঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অষ্টম বৃহত্তম শহর এর নাম হলো, সান আন্তোনিও। আর এই শহরটি তেল ও গ্যাস শিল্পের কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপক ভাবে পরিচিত। এছাড়াও পর্যটকদের কাছেও এই শহর টি বিশেষ ভাবে জনপ্রিয়।
উপরের তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট ০৮ টি শহর নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। তবে এগুলো ছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরো অনেক বড় বড় শহর আছে। যে শহর গুলোর নাম নিচে উল্লেখ করা হলো। যেমন,
- বাল্টিমোর
- মেরিল্যান্ড
- বোস্টন
- ম্যাসাচুসেটস
- ক্যানসাস সিটি
- মিসৌরি
- কিং কাউন্টি
- ওয়াশিংটন
- লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি
- ক্যালিফোর্নিয়া
- মেমফিস
- টেনেসি
- মেনহাটনে
- নিউ ইয়র্ক
- ডেট্রয়েট কাউন্টি
- মিশিগান
- রিভারসাইড কাউন্টি
- ক্যালিফোর্নিয়া
উপরের তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরো কিছু শহরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যে শহর গুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিখ্যাত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু অজানা বিষয়
উপরের আলোচনা থেকে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে অনেক তথ্য জেনেছি। তবে এবার আমি আপনাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কিছু অজানা বিষয় শেয়ার করবো। যে বিষয় গুলো আপনার জেনে নেওয়া দরকার। আর সেগুলো নিচে ধাপে ধাপে উল্লেখ করা হলো। যেমন,
- ১৯৯৮ সালে রাষ্ট্রপতি ”বিল ক্লিনটনের” সময় জাতীয় ফল আমেরিকান আপেল ঘোষণা করা হয়েছিল।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বৃহত্তম শহর এর নাম হলো, নিউ ইয়র্ক সিটি। যা মূলত ৫৯ টি কাউন্টি তে বিভক্ত। এই কাউন্টি গুলির মধ্যে প্রতিটার জন্য পৃথক পৃথক সরকার এবং প্রশাসন রয়েছে।
- আমরা সকলেই জানি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ভাষা ইংরেজি। তবে আপনি জানলে অবাক হয়ে যাবেন, কারন এটি একটি বহুভাষিক দেশ।
- বর্তমান সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩০০ টি ভাষার প্রচলন আছে। যার মধ্যে সবচেয়ে ব্যবহৃত ভাষা গুলো হলো, স্প্যানিশ, চীনা, ফরাসি এবং জার্মান।
- ১৯৮৬ সালে রাষ্ট্রপতি ”রোনাল্ড রিগানের” সময় ”রডোডেনড্রন” কে জাতীয় ফুল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল।
- ১৯৭৭ সালে রাষ্ট্রপতি ”জিমি কার্টারের” সময় পাইন গাছ কে জাতীয় গাছ ঘোষণা করা হয়েছিল।
- আমরা সকলেই জানি যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পাখি ঈগল। এটি ১৭৮২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সরকার দ্বারা জাতীয় প্রতীক হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিল।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকাটি ৫০টি তারার একটি তারার ক্ষেত্র নিয়ে গঠিত। তবে, ১৯১২ সালের আগে, পতাকাটি তে ৪৮টি তারা ছিল।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীর নাম হলো, ওয়াশিংটন, ডি.সি। এটি একটি ফেডারেল জেলা যা কোনও রাজ্যের অংশ নয়।
- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় প্রাণী বিড়াল। এটি ১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রপতি ”রিচার্ড নিক্সনের” সময় ঘোষণা করা হয়েছিল।
উপরের তালিকা তে আপনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে এমন কিছু তথ্য জানতে পেরেছেন। যেগুলো আপনার অজানা ছিলো। আর আশা করি, এই তথ্য গুলো আপনার কাছে অনেক ভালো লাগবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংস্কৃতি কেমন?
যেহুতু আজকের আলোচনা তে আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানলাম। সেহুতু এবার আমাদের এই দেশটির সংস্কৃতি সম্পর্কে কিছু জেনে রাখা দরকার। আর এবার আমি আপনাকে এই দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে স্বল্প আকারে ধারনা দেওয়ার চেষ্টা করবো।
তো স্বাভাবিক ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিত্বের মূল্যবোধ সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এছাড়াও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি বহুসংস্কৃতির দেশ হিসেবে পরিচিত। কেননা, এই দেশের মধ্যে বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠী বসবাস করে। এর পাশাপাশি এই দেশের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় গোষ্ঠীর লোকেরা একসাথে বাস করে।
আর এটি একটি বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির দেশ হওয়ার পাশাপাশি খাবারের দিক থেকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্যতম। কেননা, এই দেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের খাবার এর জনপ্রিয়তা আছে। যেমন, হ্যামবার্গার, পিৎজা, স্যান্ডউইচ, বারবিকিউ, ফ্রাইড চিকেন, আইসক্রিম, কেক, প্যাস্ট্রি ইত্যাদি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে আমাদের শেষকথা
আমাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়। আর সেই ধারাবাহিকতায় আজকে আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।
তো যারা আসলে এই দেশটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছেন। আশা করি, তাদের জন্য এই লেখাটি অনেক হেল্পফুল হবে।
তবে আমাদের ওয়েবসাইটে পাবলিশ করা আর্টিকেল সম্পর্কে যদি আপনার কোনো ধরনের মতামত কিংবা অভিযোগ থাকে। তাহলে নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন।
আর এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।