সেনজেন অর্থ কি?

১৯৮৫ সালে লুক্সেমবার্গের শেনজেন শহরে শেনজেন চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ একটি একীভূত অঞ্চল তৈরি করেছিলো। যে চুক্তির লক্ষ্য ছিল সদস্য দেশ গুলোর মধ্যে থাকা মানুষের যাতায়াত সহজ করা। বর্তমানে, ২৭টি ইউরোপীয় দেশ শেনজেন এলাকার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যে এলাকায় পাসপোর্ট নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই সদস্য দেশ গুলোর মধ্যে যাতায়াত করা সম্ভব। 

তবে শেনজেন ভিসা হলো একটি বিশেষ ধরণের ভিসা যা শেনজেন এলাকার যে কোনো দেশে ৯০ দিন থেকে ১৮০ দিন পর্যন্ত ভ্রমণের অনুমতি প্রদান করে। শেনজেন এলাকা এবং শেনজেন ভিসা ইউরোপীয় একীভূত করণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত। যা ইউরোপীয়দের মধ্যে যোগাযোগ এবং সহযোগিতা বৃদ্ধি করেছে এবং ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক সুযোগ-সুবিধা প্রসারিত করেছে।

সীমান্তহীন ইউরোপ: শেংগেন অঞ্চলের রহস্য উন্মোচন

কল্পনা করুন, আপনি ইউরোপ ভ্রমণে আছেন। পাসপোর্ট স্ট্যাম্পের ঝামেলা ছাড়াই, আপনি এক দেশ থেকে অন্য দেশে সাবলীলভাবে চলাফেরা করছেন। ঐতিহাসিক স্থাপত্য, মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্য, এবং বিভিন্ন সংস্কৃতি আপনাকে আকৃষ্ট করছে। আর এই স্বপ্নকে বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করবে শেংগেন অঞ্চল, যা ইউরোপের 27 টি দেশকে এক অভূতপূর্ব সীমান্তহীন অঞ্চলে পরিণত করেছে।

প্রায় 42 কোটিরও বেশি মানুষের বাসস্থান এই শেংগেন অঞ্চল। 1985 সালে শেংগেন চুক্তি স্বাক্ষর করার মাধ্যমে এই অঞ্চলের ভিত্তি স্থাপিত হয়। যার লক্ষ্য ছিল ইউরোপীয়দের মধ্যে যোগাযোগ, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটনকে উৎসাহিত করা। 1995 সালে চুক্তিটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে, শেংগেন অঞ্চল কেবল ভৌগোলিক সীমানা ভেঙে ফেলেনি, বরং মানুষের মনে গড়ে তোলা অদৃশ্য প্রাচীরও ভেঙে দিয়েছে।

শেংগেন অঞ্চলের ইতিহাস: সীমান্তহীন ইউরোপের গল্প

উপরের আলোচনা থেকে সেনজেন অর্থ কি তা জানতে পারবেন। তবে এই বিষয়টি জানার পাশাপাশি আমাদের শেংগেন অঞ্চলের ইতিহাস সম্পর্কেও জেনে নেওয়া দরকার। তাই নিচে ধাপে ধাপে সেনজেন অঞ্চলের ইতিহাস তুলে ধরা হলো।

১৯৮৫ সালের ঐতিহাসিক মুহূর্ত

লুক্সেমবার্গের শেংগেন শহর যা মোজেল নদীর তীরে অবস্থিত। আর এই মনোরম শহরটি ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছিল ১৯৮৫ সালে। যে বছরে মোট ৫ টি ইউরোপীয় দেশ এক ঐতিহাসিক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলো। যা পরবর্তীতে ‘শেংগেন চুক্তি’ নামে পরিচিতি লাভ করে। এই চুক্তির লক্ষ্য ছিল এক অভাবনীয় স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা। সেটি হলো, ইউরোপের দেশ গুলোর মধ্যে সীমান্তহীন যাতায়াত ব্যবস্থা চালু করা।

সীমান্তের বেড়াজাল ভাঙার স্বপ্ন

দীর্ঘদিন ধরে, ইউরোপের দেশ গুলো কঠোর সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাদের ভূখণ্ড রক্ষা করে আসছিলো। পাসপোর্ট, ভিসা, কাস্টমস নিয়ন্ত্রণ – এসব ছিল যাত্রীদের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী। কিন্তু শেংগেন চুক্তি স্বপ্ন দেখালো এক অন্য ইউরোপের। যেখানে মানুষ পাসপোর্ট ছাড়াই, নির্বিঘ্নে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করতে পারবে।

শেংগেন ঐকমত্য: স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে

১৯৯০ সালে শেংগেন ঐকমত্য স্বাক্ষরের মাধ্যমে সীমান্তহীন ইউরোপের স্বপ্ন আরো স্পষ্ট রূপ লাভ করে। সে অনুযায়ী, সদস্য দেশ গুলো তাদের মধ্যকার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ সম্পূর্ণভাবে সরিয়ে ফেলবে। এর ফলে, শেংগেন অঞ্চলের মানুষ পাসপোর্ট ছাড়াই, মাত্র পরিচয়পত্র দেখিয়ে যেকোনো সদস্য দেশে ভ্রমণ করতে পারবে।

১৯৯৫: সেনজেন অঞ্চলের ঐতিহাসিক সূচনা

শেষ পর্যন্ত, ১৯৯৫ সালের ২৬শে মার্চ শেংগেন ঐকমত্য কার্যকর হয়। এই ঐতিহাসিক ঘটনা ইউরোপের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। সীমান্তের বেড়াজাল ভেঙে, ইউরোপের মানুষ পেল এক অভাবনীয় স্বাধীনতা।

শেংগেন অঞ্চলের বিস্তার

শেংগেন চুক্তি ও ঐকমত্য স্বাক্ষরের পর থেকে, ক্রমশ নতুন নতুন দেশ এই অঞ্চলে যোগদান করে। বর্তমানে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭ টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে ২২ টি শেংগেন অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এছাড়াও, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে ৪ টি দেশ – আইসল্যান্ড, লিশটেনস্টাইন, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ড – শেংগেন অঞ্চলের অংশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে।

শেংগেন এলাকা: স্বপ্নের অঞ্চলের লুকানো কাঁটা

শেংগেন অঞ্চল – ইউরোপের 27 টি দেশের এক অসাধারণ সংমিশ্রণ, যেখানে পাসপোর্ট ছাড়াই 42 কোটি মানুষের স্বাধীন যাতায়াতের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়েছে। কিন্তু এই স্বপ্নের অঞ্চলের বুকে লুকিয়ে আছে কিছু কঠিন চ্যালেঞ্জ, যা ঝুঁকির মুখে ফেলছে এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তার উপর।

অবৈধ অভিবাসনের জোয়ার

শেংগেন অঞ্চলের উন্নত জীবনের তাগিদে অবৈধ অভিবাসীদের ঢল নেমে এসেছে। দুর্বল সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ, জালিয়াতি এবং মানব পাচারের কালো বাজার সমস্যাকে আরও তীব্র করে তুলেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধের কালো ছায়া 

সীমান্তহীন ভ্রমণ ব্যবস্থা অপরাধীদের জন্য সুযোগ করে দিয়েছে। মাদক পাচার, অস্ত্র চোরাচালান, মানব পাচার এবং সাইবার অপরাধের মতো ঘটনা ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আপনার জন্য আমাদের শেষকথা

আজকের আর্টিকেলে সেনজেন অর্থ কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তবে এরপরেও যদি আপনার মনে সেনজেন সম্পর্কে আরো প্রশ্ন থাকে তাহলে সেটি নিচে কমেন্ট করবেন। ধন্যবাদ, এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই ওয়েবসাইটটি কোনও অফিসিয়াল ভিসা বা ভ্রমণ সংস্থা নয় এবং এই সাইটের সমস্ত তথ্য অনলাইন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এবং পসিবল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *