ঔষধি গাছের নামের তালিকা |10 টি ঔষধি গাছের নাম

গাছ, আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। অক্সিজেন সরবরাহ, খাদ্য, আশ্রয়, ঔষধ – সবকিছুই আমরা গাছ থেকে পাই। কিন্তু আমরা কি ঔষধি গাছের নাম ও উপকারিতা সম্পর্কে কতটুকুই বা জানি?

গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ঔষধি গাছ দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। হৃদরোগ, কিডনি, ক্যান্সার, লিভারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসায়ও এদের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের আশপাশে থাকা অনেক গাছেই লুকিয়ে আছে অসাধারণ ঔষধি গুণ।

ঔষধি গাছ বলতে কি বোঝায়?

যেসব গাছ বা উদ্ভিদ থেকে প্রাকৃতিক ঔষধ বা প্রাথমিক রোগ নিরাময় ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়, সে গুলো কে ঔষধি গাছ বলা হয়। 

আর সময়ের সাথে সাথে ঔষধি গাছের গুরুত্ব ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ, ঔষধি গাছ থেকে প্রাকৃতিক ঔষধ তৈরি করা হয়। যার কারণে ঔষধি গাছের কোনো প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকেনা। আর যদি পাশ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে তাহলেও তার পরিমান খুব কম। এছাড়াও ঔষধি গাছ সহজলভ্য হওয়ার কারণে তুলনামূলক ভাবে কম খরচে পাওয়া যায়।

১০ টি ঔষধি গাছের নাম

বর্তমান সময়ে আমাদের বাংলাদেশের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছ দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তুু বিভিন্ন সময় আমাদের সেই ঔষধি গাছ গুলোর নাম জানার দরকার পড়ে। আর সে কারণে এবার আমি একটি তালিকা প্রদান করবো যে তালিকায় আপনি মোট ১০ টি ঔষধি গাছেন নাম দেখতে পারবেন। যেমন, 

  1. অর্জুন
  2. পাথরকুচি
  3. চিরতা
  4. স্বর্ণলতা
  5. থানকুনি
  6. ধুতরা
  7. দূর্বা ঘাস
  8. লজ্জাবতী
  9. জবা
  10. তুলসী

উপরের তালিকায় আপনি শুধুমাত্র ১০ টি ঔষধি গাছের নাম দেখতে পাচ্ছেন। তবে এর বাইরে এমন অনেক ঔষধি গাছ আছে যেগুলো বিভিন্ন রোগ নিরাময় করার কাজে ব্যবহৃত হয়। যে গাছ গুলো নিয়ে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। 

ঔষধি গাছের নামের তালিকা ও উপকারীতা

কোনো প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকায় বর্তমানে অনেক কঠিন রোগের চিকিৎসার জন্য ঔষধি গাছ ব্যবহার করা হয়। আর আমাদের বসতবাড়ির আশেপাশে অনেক ঔষধি গাছ থাকলেও আমাদের কাছে সেটি অজানাই থেকে যায়। তো সেজন্য এবার আমি আপনাকে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গাছের নামের তালিকা প্রদান করবো। এর পাশাপাশি সেই গাছ গুলো থেকে কি কি উপকার পাবেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো। 

০১ – মেথির ঔষধি উপকারীতা

মেথিতে থাকা ফাইবার ও ফাইটোকেমিক্যাল রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা কমিয়ে ওজন হ্রাসে ভূমিকা রাখে। মেথিতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি বৃদ্ধি করে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং পেটের সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে। মেথি শ্বাসনালীর রোগ প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী। এটি কাশি, সর্দি, জ্বর, এবং ব্রংকাইটিসের মতো শ্বাসনালীর সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।

০২ – আমলকির ঔষধি উপকারীতা

আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী। এটি ত্বকের বলিরেখা কমাতে, চুল পড়া রোধ করতে এবং চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়াও আমলকিতে থাকা ফাইবার হজমশক্তি উন্নত করে এবং কোষ্ঠ কাঠিন্য দূর করে। 

০৩ – আদার ঔষধি উপকারীতা

কার্যকরী ঔষধি গুণাগুণ বিশিষ্ট মসলা হলো আদা। রান্নার স্বাদ বাড়ানোর পাশাপাশি, আদার রয়েছে অসাধারণ ঔষধি গুণাগুন। আদা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ভাইরাল প্রোপার্টি সম্পন্ন, যা সর্দি-কাশির উপসর্গ কমাতে সাহায্য করে। এটি গলা ব্যথা, বুক ব্যথা, এবং কাশি থেকে দ্রুত মুক্তি দেয়। আদা পেটের গ্যাস ও অম্বল দূর করতেও যথেষ্ট কার্যকর।

০৪ – হলুদের ঔষধি উপকারীতা

হলুদে থাকে কারকিউমিন নামক এক ধরণের উপাদান যা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। হলুদের অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ব্রণ প্রতিরোধ ও ত্বকের প্রদাহ কমায়। হলুদ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। 

০৫ – সজনে ডাটার ঔষধি উপকারীতা

সাজনা আমাদের কাছে মজাদার সবজি হিসেবে পরিচিত। সাজনা ডাটায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান আছে। যেমন ভিটামিন এ, সি, ই, কে, বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ফাইবার ইত্যাদি। সাজনা ডাটায় থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। সাজনা ডাটার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ লিভারের কোষের ক্ষতি রোধ করে এবং লিভারের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

সাজনা ডাটায় থাকা ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সর্দি-কাশির মতো সংক্রমণ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি রুচি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। সাজনা ডাটার অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণ বাতের ব্যথা ও প্রদাহ কমায়।

০৬ – নিম পাতার ঔষধি উপকারীতা

নিমের পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। নিয়মিত নিম পাতা খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং জটিলতা প্রতিরোধে করে। নিমের তেল কীটপতঙ্গের কামড় থেকে রক্ষা করে। এটি মশা, মাছি, পোকামাকড়ের কামড়ের ফোলাভাব, চুলকানি, এবং ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। নিমের ডাল দাঁত ও মাড়ির জন্য খুব ভালো। নিয়মিত নিমের ডাল দিয়ে দাঁত ব্রাশ করলে দাঁতের ব্যথা, প্লাক, এবং মাড়ির প্রদাহ দূর হয়।

০৭ – তুলসীর ঔষধি উপকারীতা

তুলসী, ‘পবিত্র তুলসী’ নামে পরিচিত। তবে তুলসী শুধু ধর্মীয় গুরুত্বের জন্যই নয় বরং এর অসাধারণ ঔষধি গুণাগুণের জন্যও সুপরিচিত। তুলসী পাতার জ্বর কমানোর ক্ষমতা রয়েছে। তুলসী পাতার রস বা চা জ্বর দ্রুত কমিয়ে দিতে পারে। তুলসীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তুলসী পাতার রস, চা, বা স্যুপ ঠান্ডা ও কাশির উপসর্গ দ্রুত কমাতে পারে।

০৮ – জবার ঔষধি উপকারীতা 

শৌখিন মানুষের কাছে জবা শুধুমাত্র একটি ফুল হিসেবে পরিচিত। কিন্তুু এই জবার মধ্যে যে এতো বেশি পরিমান উপকারীতা আছে যা অনেকের কাছে অজানা। জবা ফুলের রস নারীদের রজঃচক্রের সমস্যা সমাধানে ও স্রাবজনিত সমস্যা সমাধানে উপকারী। এর পাশাপাশি নারীদের প্রসব বেদনা কমাতেও অনেক সাহায্য করে। জবা ফুলের চা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

০৯ – লজ্জাবতীর ঔষধি উপকারীতা

লজ্জাবতী পাতার রস ডায়রিয়া রোগ নিরাময়ে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। লজ্জাবতী পাতা ও শিকড়ের রস হাত-পায়ে বিভিন্ন ঘা ও ব্যাথা সারায়। লজ্জাবতী পাতার রস আমাশয় রোগে উপকারী। এর পাশাপাশি লজ্জাবতী পাতার রস পায়ের জ্বলাভাব প্রতিরোধে সাহায্য করে।

১০ – দূর্বা ঘাসের ঔষধী উপকারীতা

প্রাচীনকাল থেকেই দূর্বা ঘাস বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দূর্বা ঘাসে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা ত্বক ও চুলের জন্য ভালো। দূর্বা ঘাসের রস কাশি ও জ্বর কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও দূর্বা ঘাসের রস মূত্রনালীর সংক্রমণ যেমন প্রস্রাবে জ্বালা ও ইউটিআই দূর করার ক্ষেত্রেও অনেক উপকারী। 

১১ – ধুতরা গাছের ঔষধী উপকারীতা 

ধুতরা তেল ফোলাভাব ও ব্যাথা কমায়। যৌন শক্তিতে অক্ষম পুরুষের জন্য ধুতরার বীজ অনেক উপকারী। ধুতরার পাতার রস এজমার উপসর্গ ও শ্বাসকষ্ট দুর করে। তবে একটা বিষয় বলে রাখা ভালো যে, ধুতরা গাছ অত্যন্ত বিষাক্ত। সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আর শিশুদের নিকট থেকে ধুতরার গাছ কিংবা ফুল দুরে রাখার চেস্টা করবেন। 

১২ – থানকুনি গাছের ঔষধী উপকারীতা

থানকুনি পাতার রস পেটের অম্বল, অজীর্ণ, আমাশয়, এবং ডায়রিয়া দূর করে। এছাড়াও হজমশক্তি ও শারীরিক এবং মানসিক কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি, ক্ষত নিরাময় করার ক্ষেত্রেও অনেক কার্যকরী। 

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

বিভিন্ন রোগ নিরাময় করার জন্য আমাদের ঔষধি গাছ অবশ্যই খাওয়া উচিত। তবে সবকিছু জেনে শুনে তারপর ঔষধি গাছ ব্যবহার করার চেস্টা করবেন। সেজন্য আপনাকে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ব্যক্তির শরনাপন্ন হতে হবে। তাহলেই আপনি একটি ঔষধি গাছের আসল গুনাগুন পাবেন। 

আর এমন ধরনের আরো ঔষধি গাছ সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের সাথে থাকবেন। ধন্যবাদ, এতক্ষন ধরে আমার লেখাটি পড়ার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই ওয়েবসাইটটি কোনও অফিসিয়াল ভিসা বা ভ্রমণ সংস্থা নয় এবং এই সাইটের সমস্ত তথ্য অনলাইন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এবং পসিবল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *