জার্মানিতে সরকারিভাবে যাওয়ার সূবর্ণ সুযোগ

Golden opportunity to visit Germany officially: বিশ্বের অন্যতম উন্নত দেশ জার্মানিতে সরকারিভাবে যাওয়ার বিরাট একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে। কারণ এখন থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৩ লাখ কর্মীকে সরকারিভাবে জার্মানিতে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হবে। আর আপনারা যারা এই সুযোগে জার্মানি যাওয়ার আবেদন করতে চাচ্ছেন তাদের কি কি যোগ্যতা থাকতে হবে সেগুলো নিয়ে আজকে বিস্তারিত আলোচনা করবো।

কেন জার্মানিতে ওয়ার্কার নিয়োগ দিচ্ছে?

সবার শুরুতে আমাদের জানতে হবে যে, জার্মানি কেন বিদেশি ওয়ার্কারদের সুযোগ দিচ্ছে। তো এই বিদেশি কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ আছে। আর তার মধ্যে অন্যতম একটি কারণ হলো জার্মানির অধিকাংশ মানুষ ধনী। যার কারণে তারা তাদের ছোটো ছোটো কাজ গুলো করার জন্য কর্মী নিয়োগ দেয়।

তবে আগের দিন গুলোতে যারা জার্মানিতে আশ্রয়/শরনার্থী হিসেবে যেত তাদের মাধ্যমে এই ধরনের কাজ গুলো করা হতো। কিন্তুু বর্তমান সময়ে জার্মানিতে শরনার্থী প্রবেশ বন্ধ করে দিয়েছে। যার কারণে জার্মানিতে থাকা স্টার্টিং লেভেলের কাজ গুলো করার জন্য শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে।

আর এই শ্রমিক সংকট নিরসনে জার্মানি সরকার এমন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। তারা চাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দক্ষ জনবল নিয়োগ দেওয়ার জন্য। যাতে করে তাদের দেশে যেন শ্রমিক সংকট না থাকে অপরদিকে তারা যেন তাদের স্টার্টিং লেভেলের কাজ গুলো দক্ষ শ্রমিকদের মাধ্যমে করাতে পারে।

কোন ওয়ার্ক ভিসায় জার্মানিতে সরকারিভাবে যাওয়া যাবে?

বর্তমান সময়ে জার্মানির সরকার মোট দুই ধরনের ভিসার মাধ্যমে দক্ষ জনবল নিয়োগ দিচ্ছে। আর সেই ভিসার ধরন গুলো হলো,

  1. Work Visa for qualified professional
  2. EU Blue Card

উপরের এই দুই ধরনের ভিসার মাধ্যমে আপনি কাজের ভিসায় সরকারিভাবে জার্মানি যেতে পারবেন। তাই এই ভিসার ধরন গুলোর পার্থক্য সম্পর্কে আমাদের কিছুটা ধারনা রাখা দরকার।

Work Visa for qualified professional

আপনাদের যাদের বিভিন্ন দক্ষতা আছে তারা এই ভিসার মাধ্যমে জার্মানি যেতে পারবেন। যেমন, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষকতা ইত্যাদি দক্ষতার ব্যক্তিদের জন্য এমন ভিসা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

EU Blue Card

এই ধরনের ভিসার জন্য সব ধরনের মানুষ আবেদন করতে পারবে। কারণ, যেগুলো স্টার্টিং লেভেলের কাজ আছে এই ভিসার ধরনের মাধ্যমে সেই কাজ গুলো করা যাবে। যেমন, প্ল্যাম্বিং, কনস্ট্রাকশন, নার্স ইত্যাদি।

তবে অন্যান্য সময় গুলোতে জার্মানি ওয়ার্ক ভিসার জন্য ভাষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন ছিলো। কিন্তুু এখন পর্যন্ত Work Visa for qualified professional এবং EU Blue Card ভিসার জন্য কোনো ভাষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন হবেনা। কিন্তুু পরবর্তী সময়ে জার্মান সরকার এই নিয়মের মধ্যে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।

কারা জার্মানি ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবে? 

এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, কারা সরকারি ভাবে জার্মানি যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবে। তো এই প্রশ্নের উত্তরে বলো চাইলে সবাই জার্মানি যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না। কারণ, তারা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তিরাই এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবে।

যেমন ধরুন আপনি যদি কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন তাহলে আপনাকে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। যা ওয়ার্ক ভিসা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি প্রক্রিয়া। আর এই ভিসার সাথে চলমান সময়ের ওয়ার্ক ভিসার কোনো সম্পর্ক থাকবে না।

তবে আপনার যদি কোনো পেশাগত দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি জার্মানিতে ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। যেমন, ডাক্তার, নার্স, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পেশাদার ব্যক্তিরা এই ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এর পাশাপাশি যাদের মিড লেভেলের কাজের দক্ষতা আছে তারাও উক্ত ভিসায় আবেদন করতে পারবেন। যেমন, আপনার যদি প্ল্যাম্বিং, ইলেকট্রিশিয়ান, বাবুর্চির দক্ষতা থাকে তাহলে আপনি এই ভিসার জন্য যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে বিবেচিত হবেন।

কিন্তুু যদি আপনার এই ধরনের কোনো দক্ষতা না থাকে তাহলে আপনাকে ২ বছর সময় দিয়ে কোনো কাজে দক্ষ হতে হবে। তারপর আপনি উক্ত দক্ষতায় সরকারিভাবে জার্মানি যাওয়ার সুযোগ পাবেন।

সরকারিভাবে জার্মানি যাওয়ার ভিসা ফি কত?

আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে দালালের সহায়তা নেয়। তো আপনি যদি বর্তমান সময়ে জার্মানি যেতে চান তাহলে আপনি ভুলেও এমন পন্থা অনুসরন করবেন না। এর কারণ হলো, এখন জার্মানিতে সরকারি ভাবে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তাই আপনি এখন নিজেই নিজের দক্ষতার মাধ্যমে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন।

আর এই ভিসার আবেদন করার জন্য শুধুমাত্র আপনার ভিসা ফি এর জন্য ৭৫ ইউরো খরচ করতে হবে। যা আমরাদের বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৮,৮৬৪ টাকা। এর বাইরে আপনাকে আর কোনো ধরনের অর্থ খরচ করার প্রয়োজন হবেনা। তবে এর বাইরে আপনি যদি অন্য কাজে অর্থ ব্যয় করেন তাহলে সেটি নিজ দায়িত্বে খরচ করবেন।

ওয়ার্ক ভিসায় জার্মানি যেতে কি কি লাগবে?

আপনারা যারা চলমান সময়ে ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় জার্মানি যেতে চান তাদের অবশ্যই কোনো না কোনা কাজে দক্ষ হতে হবে। কারণ যদি আপনার দক্ষতা না থাকে তাহলে আপনি জার্মানিতে ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।

সেক্ষেত্রে যদি আপনার এমন কোনো কাজের কমপক্ষে ০২ বছরের দক্ষতা থাকে তাহলে আপনাকে জার্মানির কোনো কোম্পানিতে জবের জন্য আবেদন করতে হবে। এরপরও যখন জার্মানির কোনো কোম্পানি থেকে জব অফার লেটার দেওয়া হবে তারপর আপনাকে ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে।

কিন্তুু আপনাদের যাদের পেশাদার কোনো কাজে দক্ষতা থাকে তাহলে আপনার জন্য লাইসেন্স দরকার হবে। যেমন, আপনি যদি একজন ডক্টর হয়ে থাকেন তাহলে আপনার ডক্টরি লাইসেন্স দরকার হবে। আর আপনার যদি কোনো কাজে কোনোরকম দক্ষতা না থাকে তাহলে আপনাকে অবশ্যই কোনো ট্রেনিং সেন্টার থেকে নির্দিষ্ট কাজে প্রশিক্ষন নিতে হবে।

জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেসিং হতে কত সময় লাগবে?

অতীতের দিন গুলোতে যারা জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করতো তাদের মাসের পর মাস সময় লেগে যেতো। কিন্তুু অবাক করার মতো বিষয় হলো, বর্তমানে জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা প্রসেসিং হতে খুব বেশি সময়ের দরকার হয়না। সেক্ষেত্রে আপনার যদি আবেদন করার যোগ্যতা থাকে তাহলে সঠিকভাবে আবেদন করলে সেটি প্রসেসিং হতে কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে।

যা থেকে এটা ষ্পষ্ট ভাবে বোঝা যায় যে, আপনি মাত্র ০১ মাসের মধ্যেই আপনার ভিসা আবেদন এর ফলাফল জানতে পারবেন। কিন্তুু আপনি যদি আবেদন করতে কোনো ভুল করেন অথবা কোনো ভুল তথ্য প্রদান করেন সেক্ষেত্রে আপনার সময় কিছুটা বেশি লাগতে পারে।

কিভাবে ভিসা আবেদন করবেন?

বর্তমান সময়ে জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন করার প্রক্রিয়াটি খুব সহজ করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আপনি নিজেই আপনার দক্ষতার উপর ভিত্তি করে ভিসা আবেদন করতে পারবেন। আর এই কাজটি করার আগে আপনাকে একটি কাভার লেটার লিখতে হবে। উক্ত কাভার লেটারে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে যে, আপনি কেন তাদের কোম্পানিতে কাজ করার জন্য উপযুক্ত।

তো ভিন্ন ভিন্ন দক্ষতার ক্ষেত্রে আপনাকে ভিন্ন কোম্পানিতে আবেদন করতে হবে। তবে আপনার জার্মানি ওয়ার্ক ভিসার আবেদন করার প্রক্রিয়া অনেকটা একই রকম। সেজন্য আবেদন করার আগে আপনাকে নিচের লিংকে প্রবেশ করতে হবে।

তারপর উপরের ওয়েবসাইটে আপনি বিভিন্ন ধরনের জব নিউজ দেখতে পারবেন। সেখানে আপনার দক্ষতার উপর যেসব জব নিয়োগ আছে সেগুলোতে আবেদন করতে হবে। কারণ, জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য সবার প্রথমে আপনার নিকট জব অফার লেটার থাকতে হবে। আর সে কারণে জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসা আবেদন প্রক্রিয়াকে বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন,

  1. Check the requirement
  2. Make the appointment at the German Embassy
  3. Apply for a visa in the country of Residence
  4. Enter Germany
  5. Apply for a Residence permit in Germany

তো আপনারা যারা জার্মানি ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করবেন তাদের উপরের পদ্ধতি গুলো অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

আপনার জন্য আমাদের শেষকথা

যারা আমাদের দেশ থেকে ওয়ার্ক ভিসায় সরকারি ভাবে জার্মানি যেতে চান তাদের জন্য আজকের লেখাটি অনেক হেল্পফুল হবে। কারণ আপনার যোগ্যতা থেকে শুরু করে ভিসা আবেদন করা পর্যন্ত যাবতীয় বিষয় গুলো তুলে ধরা হয়েছে আজকের আর্টিকেলে।

তবে এরপরও যদি আপনার জার্মানি ওয়ার্ক ভিসা আবেদন করা নিয়ে আরো কোনো জানার থাকে তাহলে সেটি নিচে কমেন্ট করবেন। আর এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই ওয়েবসাইটটি কোনও অফিসিয়াল ভিসা বা ভ্রমণ সংস্থা নয় এবং এই সাইটের সমস্ত তথ্য অনলাইন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এবং পসিবল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *