ড্রাইভিং লাইসেন্স ভোগান্তি! এক দিনেই লাইসেন্স পাবেন

আগে পরীক্ষার্থীদের বিআরটিএ অফিসে একাধিকবার আসতে হতো। এখন শুধুমাত্র একবারই আসবেন লাইসেন্স প্রার্থীরা। তারা এক দিনের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা দেবেন এবং একই দিনে বায়োমেট্রিক দিয়ে চলে যাবেন। যার ফলে আমাদের দেশের গ্রাহক সেবার মান বাড়বে।

আর দীর্ঘদিন লাইনে দাঁড়াতে হবে না, দালালদের হাতে টাকা গুঁজতে হবে না, মাত্র একদিনেই ড্রাইভিং লাইসেন্স পেয়ে যাবেন আপনার বাড়িতে।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) গ্রাহকদের ভোগান্তি কমাতে এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন এই পদ্ধতিতে, একজন গ্রাহককে লাইসেন্সের জন্য শুধুমাত্র একবার বিআরটিএ কার্যালয়ে যেতে হবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স এর সেকাল একাল

যদি আপনি আগের দিনের কথা চিন্তা করে দেখেন তাহলে সেই সময় লাইসেন্স প্রার্থীদের পরীক্ষা নেওয়ার ১৫ দিন পর ফলাফল প্রকাশ করা হত। আর যেসব প্রার্থীরা উক্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতো তাদের ৭ থেকে ১০ দিন পর পুলিশ ভেরিফিকেশন করা হতো। পুলিশ ভেরিফিকেশনের পর পুনরায় লাইসেন্স প্রার্থীদের ০৭ দিন পর বায়োমেট্রিক দিতে হতো। 

কিন্তুু এতো কিছু করার পরে যে সহজে লাইসেন্স পাওয়া যেতো বিষয়টা এমন নয়। বরং এতো ভোগান্তির পরও প্রার্থীদের বছরের পর বছর ধরে অপেক্ষা করতে হতো তাদের স্বপ্নের ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য। তবে এই ভোগান্তির কথা চিন্তা করে এক যুগান্তকারী সিন্ধান্ত নিয়েছে বিআরটিএ।

যে সিন্ধান্তের ফলে পূর্বের তুলনায় গ্রাহকদের ভোগান্তি একবারেই কমে যাবে। এছাড়াও লাইসেন্স নেওয়ার সময় আমাদের দালালের মাধ্যমে টাকা দিতে হতো সেই দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ হবে। আর ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রক্রিয়া পূর্বের তুলনায় অনেক দ্রুত ও স্বচ্ছ হবে।

কারণ বর্তমান সময়ে মাত্র এক দিনে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা হবে, আঙ্গুলের ছাপ এবং সব কার্যক্রম শেষ করা যাবে। আর যখন আপনি পরীক্ষা ও বায়োমেট্রিক সঠিকভাবে প্রদান করবেন তারপর মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে আপনার কাঙ্খিত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত হয়ে যাবে। অবাক করার মতো বিষয় হলো, লাইসেন্স প্রস্তুুত হওয়ার পর আপনার ঠিকানায় পৌঁছে যাবে ড্রাইভিং লাইসেন্স।

একদিনের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষায় ফেল করলে কি হবে?

বর্তমান সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রার্থীদের যাবতীয় কার্যক্রম গুলো এক দিনেই সম্পন্ন করা হবে। আর এই বিষয়টি এখন আমরা কমবেশি সবাই জানি। কিন্তুু অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, আমরা যদি উক্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পারি তাহলে আমাদের কি করতে হবে?

তো ড্রাইভিং লাইসেন্স এর পরীক্ষা দেওয়ার পর যদি আপনি উত্তীর্ণ হতে না পারেন তাহলে চিন্তা করার কোনো দরকার নেই। কারণ আপনি পরীক্ষায় ফেল করলে পুনরায় আবার লাইসেন্স পাওয়ার জন্য পরীক্ষা দিতে পারবেন। তবে পরবর্তী সময়ে যখন আপনি আবার পরীক্ষা দিবেন তখন আর আপনার বায়োমেট্রিক দেওয়ার প্রয়োজন হবেনা। 

ড্রাইভিং লাইসেন্স: রাস্তায় যাত্রার পূর্ব প্রস্তুতি

মনে রাখবেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স কেবল একটি কাগজের টুকরো নয়, বরং রাস্তার যাত্রা শুরু করার এক গুরুত্বপূর্ণ অনুমতিপত্র। যে লাইসেন্স এর মাধ্যমে আপনি যানবাহন চালানোর আইনি দিক পূরণ করতে পারবেন। এর পাশাপাশি উক্ত ড্রাইভিং লাইসেন্সের মাধ্যমে আপনার দক্ষতা ও জ্ঞানের প্রমাণ দিতে পারবেন।

ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার পূর্বশর্ত

আপনাদের মধ্যে যারা প্রার্থী রয়েছেন তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স করার আগে লার্নার বা শিক্ষানবিশ লাইসেন্স অর্জন করতে হবে। আর উক্ত লাইসেন্স পেতে হলে আপনার ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা ৮ম শ্রেণী পাশ হতে হবে। কারণ, এই শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে আপনি অযোগ্য প্রার্থী বলে বিবেচিত হবেন।

এছাড়াও আপনারা যারা অপেশাদার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন তাদের বয়স ন্যূনতম ১৮ বছর হতে হবে। আর যারা পেশাদার লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন তাদের বয়স ন্যূনতম ২১ বছর বয়স হতে হবে। সেইসাথে লাইসেন্স এর জন্য আবেদনকারী প্রার্থীদের অবশ্যই মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে।

বর্তমান সময়ে আপনি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। মনে রাখবেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং সচেতন ও দায়িত্বশীল যানবাহন চালক হিসেবে রাস্তায় নিজেকে প্রমাণ করার সুবর্ণ সুযোগ।

নতুন নিয়মে ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার প্রক্রিয়া

আপনারা যারা একবারে নতুন ব্যক্তি হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে চান তাদের সবার প্রথমে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করতে হবে। আর উক্ত আবেদন প্রক্রিয়া আপনি নিজের ঘরে বসে অনলাইন থেকে করতে পারবেন। তবে যখন আপনি অনলাইনে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করবেন তখন আপনার কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের দরকার হবে। 

আরো পড়ুনঃ

  1. লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স ফরম পূরন অনলাইন
  2. লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে কি গাড়ি চালানো যায়?
  3. রেফারেন্স নাম্বার দিয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স চেক

তাই সবার প্রথমে আমাদের জেনে নেওয়া উচিত যে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করতে কি কি দরকার হবে। যা নিচের তালিকায় শেয়ার করা হলো।

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  1. ছবি: সর্বোচ্চ ১৫০ কেবি (৩০০ x ৩০০ পিক্সেল) আকারের স্পষ্ট ছবি।
  2. মেডিকেল সার্টিফিকেট: রেজিষ্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক প্রদত্ত (সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি)।
  3. জাতীয় পরিচয়পত্র: স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি)।
  4. ইউটিলিটি বিল: বর্তমান ঠিকানার স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি)।
  5. বিদ্যমান ড্রাইভিং লাইসেন্স: নবায়ন/পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্ক্যান কপি (সর্বোচ্চ ৬০০ কেবি)।

তথ্যসূত্রঃ BRTA GOV BD

তবে মনে রাখবেন, আপনি যেসব কাগজপত্র জমা দিবেন সেগুলো যেন নকল/ভুল না হয়। কারণ, আপনি যদি ভুয়া কোনো ডকুমেন্টস প্রদান করেন তাহলে আপনার লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন বাতিল বলে বিবেচিত হবে। 

কিভাবে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করবেন?

বর্তমান সময়ে লার্নার/শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন করার জন্য কারো দাড়প্রান্তে গিয়ে ঘুরতে হবেনা। কারণ, এখন লাইসেন্স প্রার্থীরা নিজের ঘরে বসে অনলাইন থেকে আবেদন করতে পারবে। আর উক্ত আবেদন করার জন্য আপনাকে কি কি কাজ করতে হবে সেগুলো নিচে ধাপে ধাপে দেখিয়ে দেওয়া হলো। যেমন, 

(bsp.brta.gov.bd)- ওয়েবসাইটে প্রবেশ করুন

ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন

ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন

আপনারা যারা অনলাইন থেকে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করবেন তাদের সবার প্রথমে bsp.brta.gov.bd এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। আর এই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর আপনি ঠিক উপরের পিকচারের মতো একটি পেজ দেখতে পারবেন। এবার আপনাকে সবার উপরের ডান পাশে থাকা “নিবন্ধন করুন” -নামক বাটনে ক্লিক করতে হবে।

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন

এবার আপনাকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য গুলো উক্ত ফরমে প্রদান করতে হবে।মনে রাখবেন, এই ফরমে আপনি যে তথ্য গুলো দিবেন সেগুলোতে যেন কোনো প্রকারের ভুল না থাকে। কারণ, আপনি যদি এই ফরমে ভুল তথ্য প্রদান করেন তাহলে আপনার আবেদনটি বাতিল করা হবে। 

লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদন ফি

আপনি যখন উপরের পদ্ধতি গুলো ফলো করে অনলাইন আবেদন করবেন তখন আপনাকে নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। কেননা, আপনি যতক্ষন পর্যন্ত ফি পরিশোধ করবেন না ততোক্ষন আপনার আবেদন গ্রহন করা হবেনা। আর নতুন নিয়ম হিসেবে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে যে ফি নির্ধারন করা হয়েছে তা হলো, 

  1. ১ ক্যাটাগরি – মোটরসাইকেল/হালকা যানবাহনের জন্য ৫১৮ টাকা।
  2. ২ ক্যাটাগরি -মোটরসাইকেল ও হালকা যানবাহনের জন্য ৭৪৮ টাকা।

উপরোক্ত আবেদন ফি আপনি বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করে দিতে পারবেন। আর যখন আপনি উপরের পদ্ধতি মেনে সফলভাবে লার্নার ড্রাইভিং লাইসেন্স এর আবেদন করবেন তারপর আপনার পরীক্ষার তারিখ, স্থান ও সময় মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। আর সচারচর ২ মাস পরে এই মেসেজটি প্রদান করা হয়।

আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা

প্রিয় পাঠক, ড্রাইভিং লাইসেন্সের ভোগান্তি আর নয়। কারণ, এখন মাত্র ১ দিনেই সংগ্রহ করতে পারবেন আপনার স্বপ্নের ড্রাইভিং লাইসেন্স। আর এই লাইসেন্স পেতে আপনাকে কি কি পদ্ধতি ফলো করতে হবে সেগুলো আজকের আর্টিকেলে শেয়ার করা হয়েছে। 

তবে এরপরও যদি আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স সম্পর্কে আরো কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে সেটি নিচে কমেন্ট করবেন। আর এতক্ষন আমাদের সাথে থাকার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি অনেক অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই ওয়েবসাইটটি কোনও অফিসিয়াল ভিসা বা ভ্রমণ সংস্থা নয় এবং এই সাইটের সমস্ত তথ্য অনলাইন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এবং পসিবল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *