বাংলাদেশে ১১৭ বছরের পুরনো সব জমির দলিল যাচ্ছে অনলাইনে: ভূমি মালিকদের জন্য করণীয়
বাংলাদেশের ভূমি মালিকদের জন্য আসছে এক বিশাল পরিবর্তন। যাদের জমির দলিল বহু বছর আগের, হয়তো তারা অনেকেই চিন্তায় থাকেন – “দলিলটা তো অনেক পুরোনো, হারিয়ে গেলে কী হবে?” এমন চিন্তার অবসান ঘটাতে এবার বাংলাদেশ সরকার ১১৭ বছরের পুরনো সব জমির দলিলকে অনলাইনে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছে।
কী হচ্ছে এই প্রকল্পে?
সরকার ঘোষণা করেছে যে, ১৯০৮ সাল থেকে শুরু করে ২০২৫ সাল পর্যন্ত রেজিস্ট্রার অফিসে সংরক্ষিত সব দলিল ধাপে ধাপে স্ক্যান করে ডিজিটাল করা হবে। এই দলিলগুলো অনলাইনে একটি কেন্দ্রীয় প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাবে।
মানে, যদি আপনার দাদার আমলের কোনো জমির দলিল থাকে – তা এখন অনলাইনেই খুঁজে পাওয়া যাবে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে আপনি নিজের দলিল খুঁজে বের করে তা যাচাই এবং প্রয়োজন হলে ডাউনলোডও করতে পারবেন।
কারা উপকৃত হবেন?
- প্রবাসে থাকা বাংলাদেশিরা
- যারা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় বসবাস করেন
- জমি সংক্রান্ত ঝামেলা এড়াতে চান এমন মালিকরা
- দলিল হারিয়ে গেছে যাদের, কিন্তু প্রমাণ করতে হবে মালিকানা
এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য কী?
এই প্রকল্পের সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য হলো দুর্নীতি ও প্রতারণা রোধ করা। দীর্ঘদিন ধরে দেখা গেছে, মূল মালিক অনুপস্থিত থাকলে জাল দলিল তৈরি করে অন্য কেউ জমি বিক্রি করে দেয়। অনলাইনে দলিল যাচাইয়ের সুযোগ থাকলে এই জালিয়াতি অনেকটাই বন্ধ হবে।
একজন আইনজীবী তৌফিক জানান, আগে রেজিস্টার অফিসে দলিল খুঁজতে গিয়ে অনেককে ১০০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হতো। অথচ সরকারি ফি মাত্র ২০ টাকা! অনলাইনের মাধ্যমে এই হয়রানি এখন বন্ধ হবে।
অনলাইনে দলিল কীভাবে পাওয়া যাবে?
এই প্রকল্প শেষ হলে সরকার একটি নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট চালু করবে যেখানে আপনি:
- আপনার দলিল খুঁজে বের করতে পারবেন
- দলিল যাচাই করতে পারবেন
- নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে অনলাইন কপি ডাউনলোড করতে পারবেন
এমনকি যদি আপনার মূল দলিল হারিয়েও যায়, এই অনলাইন কপিই আইনি প্রমাণ হিসেবে গ্রহণযোগ্য হবে।
ভূমি মালিকদের করণীয়
এই ডিজিটাল কার্যক্রমে অংশ নিতে হলে ভূমি মালিকদের কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে:
- ধৈর্য ধরুন: সিস্টেম পুরোপুরি চালু না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
- পুরানো দলিল জমা দিন: যদি আপনার দলিল অনলাইনে না পাওয়া যায়, তবে সেটির কপি রেজিস্টার অফিসে জমা দিয়ে ডিজিটাল করার আবেদন করতে হবে।
- সঠিক দলিল ব্যবহার করুন: কোনো জাল বা পরিবর্তিত দলিল অনলাইনে গ্রহণযোগ্য হবে না।
কোন দলিল অনলাইনে নাও থাকতে পারে?
১৯৪৭ এবং ১৯৭১ সালের মতো যুদ্ধকালীন সময়ের কিছু দলিল হারিয়ে গেছে। এসব দলিল যাদের কাছে এখনও হাতে আছে, তারা চাইলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রেজিস্টার অফিসে জমা দিতে পারবেন।
এই উদ্যোগের সুবিধাসমূহ:
- দুর্নীতির পথ বন্ধ হবে
- দলিল সংরক্ষণ আরও নিরাপদ হবে
- সাধারণ মানুষ সহজে জমি সংক্রান্ত তথ্য পাবেন
- আদালতে জমি সংক্রান্ত মামলা কমবে
- ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আসবে
উপসংহার
সরকারের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ বাংলাদেশে ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। যারা নিজেদের সম্পত্তি নিয়ে নিরাপদ থাকতে চান, এই অনলাইন দলিল কার্যক্রম তাদের জন্য বড় আশীর্বাদ।
তাই এখন থেকেই প্রস্তুত থাকুন, আপনার দলিল সঠিকভাবে আছে কিনা তা যাচাই করুন, এবং প্রয়োজনে দলিলের কপি রেজিস্টার অফিসে জমা দিন।
ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখনই উদ্যোগ নিন।
সূত্র:
ভিডিও দেখুন এখানে