বাংলা বর্ষপঞ্জি | বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো? | বাংলা বর্ষপঞ্জি কি কাজে ব্যবহার করা হয়? | বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা? | বাংলা সনের সূচনা কবে হয়েছিলো? | বাংলা মাসের নামের উৎপত্তি কিভাবে হলো? | বঙ্গাব্দ অর্থ কি?

আজকে আমরা ভিন্ন একটি টপিক নিয়ে কথা বলবো। কারণ, আমরা বিভিন্ন সময় বাংলা বর্ষপঞ্জি এর নাম শুনে থাকি। তাই আমাদের মধ্যে এই বাংলা বর্ষপঞ্জি নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নের উদ্ভব হয়। যেমন, আমরা অনেকেই জানতে চাই, বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো, বাংলা বর্ষপঞ্জি কি কাজে ব্যবহার করা হয় ইত্যাদি। তাই আজকে আমি আপনাকে এই বিষয় গুলো সম্পর্কে পরিস্কার ধারনা দিবো। 

সেই সাথে বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য গুলো জানিয়ে দিবো। তো আর দেরি না করে চলুন, সরাসরি মূল আলোচনা তে ফিরে যাওয়া যাক।

 

বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো?

যেহুতু আজকের আলোচনার মূল টপিক হলো, বাংলা বর্ষপঞ্জি। সেহুতু  সবার আগে আমাদের জানতে হবে যে, বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো। আর যখন আপনি এই বিষয় টি সম্পর্কে জানতে পারবেন। তখন আপনার পরবর্তী আলোচনা গুলো বুঝতে সুবিধা হবে। 

তো আমরা সবাই জানি যে, বাংলায় যে সাল রয়েছে। সেগুলো কে মূলত বঙ্গাব্দ হিসেবে ধরা হয়। যেমন, ইংরেজি এক বছর চলে গেলে আমরা বলি যে, একটি সাল গত হলো। ঠিক তেমনিভাবে যখন আপনি বাংলা সনের কথা ভাববেন। তখন আপনাকে বলতে হবে যে, একটি বঙ্গাব্দ গত হলো। 

তবে বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে আসলো তা নিয়ে এখনও অনেক মত দ্বিমত রয়েছে। কারণ, এমন অনেক ইতিহাসবিদ এর তথ্যমতে বাংলা বর্ষপঞ্জি এর প্রথম সূচনা হয়েছিলো, শশাঙ্ক এর শাসনামলে। আর তিনি একজন হিন্দু রাজা ছিলেন। এবং তিনি যে সময় রাজ্য শাসন করেছিলেন, সেই সময়টা ছিলো ৫৯৪ বঙ্গাব্দ। 

কিন্তুু সমস্যা হলো, বাংলা সন প্রকাশে যে  “বঙ্গাব্দ” নামক শব্দটির ব্যবহার করা হয়। এই শব্দটি কিন্তুু হিন্দু রাজা শশাঙ্ক এর শাসনামলের অনেক আগেই ব্যবহার করা হতো। অর্থ্যাৎ, সম্রাট আকবর এর যে সময় কাল ছিলো। তারও অনেক অনেক শতাব্দির পুরোনো কিছু হিন্দু শিব মন্দিরে এই বঙ্গাব্দ শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। 

আর এখান থেকে এটা ষ্পষ্ট যে, আকবরের সময়কাল এর অনেক অনেক আগে বাংলা বর্ষপঞ্জি এর ব্যবহার ছিলো। আর সে কারণে বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এল, তা নিয়ে এখনও কোন সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। এবং অনেক ইতিহাসবিদদের কাছে এটি এখনও অজানা রয়েছে।

 

বাংলা বর্ষপঞ্জি কি কাজে ব্যবহার করা হয়? 

উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম যে, বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো। তবে এবার আমাদের জানতে হবে, আসলে বাংলা বর্ষপঞ্জি কি কাজে ব্যবহার করা হয়। আর ব্যবহারিক দিক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে ব্যাপক পরিমানে বাংলা বর্ষপঞ্জি এর ব্যবহার লক্ষনীয়। তবে আমাদের বাংলাদেশ এর মধ্যে যে বাংলা বর্ষপঞ্জি ব্যবহার করা হয়। সেটি মূলত  “সৌর বর্ষপঞ্জি” এর একটি সংশোধিত সংস্করণ। 

আর আমরা যেভাবে ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী, দিন, মাস ও বছর নির্ণয় করি। ঠিক তেমনি ভাবে আপনি বাংলা বর্ষপঞ্জি এর মাধ্যমে বঙ্গাব্দ নির্ণয় করতে পারবেন। তবে বাংলা বর্ষপঞ্জি এর বিশেষ কিছু দিক রয়েছে। যেমন, একটি বাংলা বর্ষপঞ্জি এর মধ্যে আপনি নির্দিষ্ট দিনে যে সকল ধর্মীয় উৎসব, তিথি, নক্ষত্র এই যাবতীয় তথ্য গুলো জানতে পারবেন। 

সে জন্য অনেক ইতিহাসবিদ এর মতে বাংলা বর্ষপঞ্জি হলো এক ধরনের সন্তোষজনক এবং যথার্থ একটি পঞ্জিকা। কেননা, জ্যোতির্বিজ্ঞান ভিত্তিক বিষয় গুলো কে যথাযথ ভাবে পর্যবেক্ষন করার মাধ্যমে বাংলা সনের দিন, তারিখ, মাস ও বছর কে নির্ণয় করা হয়ে থাকে। তো বাংলা বর্ষপঞ্জি আসলে কি কি কাজে ব্যবহার করা হয়। আশা করি আপনি সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য গুলো জানতে পেরেছেন।

 

বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা?

বাংলা বর্ষপঞ্জি কিভাবে এলো ও বাংলা বর্ষপঞ্জি কি কাজে ব্যবহার করা হয়। তা নিয়ে উপরে বিষদ ভাবে আলোচনা করা হয়েছে। তো এখন অনেকের মনে একটি প্রশ্ন জেগে থাকবে। সেটি হলো, বাংলা বর্ষপঞ্জি বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে কিনা। 

তো যদি আপনি একান্তভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জি এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি সম্পর্কে জানতে চান। তাহলে আমি আপনাকে বলবো যে, বৈজ্ঞানিক ভাবে এখনও বাংলা বর্ষপঞ্জি এর কোন প্রকার ভিত্তি নেই। এর কারণ হলো, অনেক প্রাচীনকাল থেকেই এই বাংলা বর্ষপঞ্জি এর ব্যবহার হয়ে আসছে। আর বাংলা বর্ষপঞ্জি কোনভাবেই বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষন এর উপর নির্ভর করেনা।

এছাড়াও বাংলা বর্ষপঞ্জি এর ইতিহাস থেকে এটা লক্ষ্য করা যায়। বাংলা বর্ষপঞ্জি অনেক পুরোনো শতাব্দী থেকে বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক উদ্দেশ্য সাধন এর জন্য ব্যবহার করা হয়েছিলো। এবং বর্তমান সময়েও কিন্তুু বাংলা বর্ষপঞ্জি কে সেই একই উদ্দেশ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। তাই আপনি যদি কঠোর ভাবে বাংলা বর্ষপঞ্জি তে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুজতে চান। তাহলে আপনি বাংলা বর্ষপঞ্জি তে তেমন কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি খুজে পাবেন না।

 

বাংলা সনের সূচনা কবে হয়েছিলো?

যদি আপনি আমাকে বাংলা সনের সূচনা কবে হয়েছিলো তা জিজ্ঞেস করেন। তাহলে আমি আপনাকে কোন সঠিক উত্তর দিতে পারবো না। এর কারণ হলো, এই বাংলা সনের সূচনার ইতিহাস নিয়ে রয়েছে অনেক মত ও দ্বিমত। কারণ, অনেক ইতিহাসবিদ এর মতে বাংলা সন এর প্রথম সূচনা হয়েছিলো সম্রাট আকবর এর হাত ধরে। 

অপরদিকে ভারতীয় কিছু হিন্দুত্ববাদী এই মতের সাথে কখনই সম্মতি প্রদান করেনি। বরং তাদের ধারনা অনুযায়ী বাংলা সন সম্রাট আকবরের চেয়েও অনেক আগে থেকেই সূচনা হয়েছিলো। তবে সমস্যার শেষ এখানেই নয়, বরং আরো কিছু ইতিহাসবিদের মতে সম্রাট আকবর নয়। বরং হিন্দু রাজা শশাঙ্ক এর আমল থেকে বাংলা সনের সূচনা হয়েছিলো। 

এখন আপনি যদি এই ইতিহাসবিদের মত দ্বিমতের বেড়াজালে বাংলা সনের সূচনার ইতিহাস জানতে চান। তাহলে আপাততো আপনাকে এটাই মানতে হবে যে, সম্রাট আকবর এর হাত ধরেই বাংলা সনের সূচনা হয়েছিলো। আর এই তথ্যটি অধিকাংশ ইতিহাসবিদের কাছে সত্য বলে মনে হয়েছে।

 

বাংলা মাসের নামের উৎপত্তি কিভাবে হলো? 

যেহুতু আজকের আলোচনায় আমরা বাংলা বর্ষপঞ্জি নিয়ে কথা বলছি। সেহুতু আজকে আমি আপনাকে আরো একটি বিষয় জানিয়ে ‍দিবো। সেটি হলো, বাংলা মাসের নামের উৎপত্তি কিভাবে হলো। অর্থ্যাৎ, আমরা বাংলা তে যে সকল মাসের নাম ব্যবহার করি। সেগুলো কখন, কিভাবে এলো তা নিয়ে এবার একটু ধারনা দিবো। 

তো বাংলা তে যে আমরা ১২ টি মাসের নাম দেখতে পাই। সেই মাসের নাম গুলো বিভিন্ন ধরনের নক্ষত্র মন্ডল, চাঁদের আবর্তন এবং তাঁরার যে অবস্থান রয়েছে। এই সবকিছু মিলিয়ে বাংলার ১২ টি মাসের নামকরন করা হয়েছে। আর ভারতীয় উপমহাদেশের মধ্যে “সূর্যসিন্ধান্ত” নামক একটি জ্যোতির্বিজ্ঞান এর একটি প্রাচীন গ্রন্থ রয়েছে। মূলত সেই গ্রন্থ থেকে বাংলায় ব্যবহার করা বারো মাসের নাম গুলো সংগ্রহ করা হয়েছে।

বাংলা ১২ মাসের নাম বাংলায়

  • বৈশাখ
  • জ্যৈষ্ঠ
  • আষাঢ়
  • শ্রাবণ
  • ভাদ্র
  • আশ্বিন
  • কার্তিক
  • অগ্রহায়ণ
  • পৌষ
  • মাঘ
  • ফাল্গুন
  • চৈত্র

বঙ্গাব্দ অর্থ কি?

ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আমরা যাকে বলি ১ বছর। তাকেই বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বলা হয় বঙ্গাব্দ। আর এই বাংলা বর্ষপঞ্জি কে একটি সৌর পঞ্জিকা বলা হয়ে থাকে। কারন, সূর্য উদিত হওয়ার পর থেকে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সময় কে এক সৌরদিন হিসেবে গননা করা হয়। আর বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিন করার জন্য মোট ৩৬৫ দিন সময়ের প্রয়োজন হয়।

 

বাংলা বর্ষপঞ্জি নিয়ে আমাদের শেষকথা

প্রিয় পাঠক, বরাবরের মতো আজকেও আমি একটা ইন্টারেস্টিং টপিক নিয়ে আলোচনা করেছি। এবং আজকে আমি আপনাকে বাংলা বর্ষপঞ্জি সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য গুলো জানিয়ে দিয়েছি। আশা করি, আপনি এই লেখাটি থেকে বাংলা বর্ষপঞ্জি সম্পর্কে সঠিক তথ্য গুলো জানতে পেরেছেন। 

তো আপনি যদি এই ধরনের অজানা বিষয় গুলো সহজ ভাষায় জানতে চান। তাহলে অবশ্যই Learning Boss পরিবারের সাথে থাকার চেস্টা করবেন। আর ধন্যবাদ এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য। 

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই ওয়েবসাইটটি কোনও অফিসিয়াল ভিসা বা ভ্রমণ সংস্থা নয় এবং এই সাইটের সমস্ত তথ্য অনলাইন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এবং পসিবল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন