যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতে ২০ লাখ শূন্যপদ | এইচ-১বি ভিসার ভবিষ্যৎ কী?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রযুক্তি খাতের উন্নতি ও দক্ষ কর্মীর চাহিদা পূরণের জন্য এইচ-১বি ভিসা দীর্ঘদিন ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরই এই ভিসার নিয়মে কড়াকড়ি আনতে উদ্যোগী হয়েছেন। হোয়াইট হাউসে এক সাংবাদ সম্মেলনে তিনি স্পষ্ট করেন, শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ার নয়, প্রতিটি স্তরের কর্মীকে দক্ষ এবং যোগ্য হতে হবে। তিনি বলেন, দক্ষতার ভিত্তিতেই বিদেশি কর্মীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। মার্কিন শ্রম বিভাগের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রযুক্তি খাতে প্রায় ১২ লাখ শূন্যপদ সৃষ্টি হবে, যা পূরণে প্রতি বছর প্রায় ৩.৫ লাখ প্রযুক্তিবিদের প্রয়োজন। আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্স ও ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের মতো আধুনিক প্রযুক্তির চাহিদা বাড়লেও দেশীয় দক্ষ কর্মীর সংখ্যা ক্রমশ কমছে। এই পরিস্থিতিতে বিদেশি কর্মীদের উপর নির্ভরশীলতা ক্রমেই বাড়ছে।
ট্রাম্পের প্রশাসনে এইচ-১বি ভিসার নতুন নিয়ম
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পরই এইচ-১বি ভিসা নিয়ে কঠোর নিয়ম চালুর ঘোষণা দেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি তার প্রতিশ্রুত নীতিমালা বাস্তবায়নের দিকে অগ্রসর হয়েছেন। হোয়াইট হাউসে এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে ট্রাম্প তার অবস্থান স্পষ্ট করেন, যেখানে ওরাকলের সিটিও ল্যারি এলিসন, সফটব্যাংকের সিইও মাসায়োশি সন এবং ওপেন এআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যানও উপস্থিত ছিলেন।
এইচ-১বি ভিসার পরিবর্তনের লক্ষ্য ছিল বিদেশি কর্মীদের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা এবং স্থানীয় কর্মীদের আরও সুযোগ প্রদান করা। ট্রাম্পের মতে, এই পদক্ষেপ প্রযুক্তি খাতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য কর্মসংস্থানের পথ সুগম করবে। তবে প্রযুক্তি জগতের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা এই পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করেন।
নতুন নিয়ম কার্যকর হলে প্রযুক্তি খাতের বৈশ্বিক কর্মপ্রবাহ ও মার্কিন অর্থনীতির উপর এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্ত প্রযুক্তি খাতের কর্মসংস্থান নীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
আরো পড়ুনঃ দালাল বা এজেন্সি ছাড়াই ডেনমার্ক ভিসা প্রক্রিয়া
ট্রাম্পের বক্তব্য ও এইচ-১বি ভিসা
এইচ-১বি ভিসার নিয়মাবলী নিয়ে সম্প্রতি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, ভিন দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসা প্রত্যেক ব্যক্তিকে হতে হবে যোগ্য ও দক্ষ। এটি শুধু ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রেই নয়, বরং বিভিন্ন পেশার মানুষের জন্য প্রযোজ্য। তিনি চান, প্রশিক্ষণ নিতে বা অন্যদের সাহায্য করতে আসা ব্যক্তিরাও যেন দক্ষতার মানদণ্ডে উত্তীর্ণ হতে পারেন।
ট্রাম্পের এই বক্তব্য এসেছে এমন এক সময়ে, যখন এইচ-১বি ভিসার নিয়মে কড়াকড়ি নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলছে। ইলন মাস্কের মতো ব্যক্তিরা এর শিথিলতার পক্ষে, কারণ তারা মনে করেন, এই ভিসার মাধ্যমে দক্ষ কর্মীরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে পারবেন। তবে অনেকেই মনে করেন, কড়াকড়ি না আনলে স্থানীয় আমেরিকানদের চাকরির সুযোগ ক্রমশ কমে যাবে।
হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্প আরও জানান, তার লক্ষ্য সব স্তরের দক্ষ কর্মী আনা, যারা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন। রেস্তোরাঁ কর্মী থেকে শুরু করে সুরা বিশেষজ্ঞ পর্যন্ত, সর্বক্ষেত্রে দক্ষতার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন তিনি। এই নীতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে কেবল অভিবাসন নয়, বরং কর্মসংস্থানের মান উন্নত করার লক্ষ্যে অগ্রসর হতে চান ট্রাম্প।
আরো পড়ুনঃ অনলাইনে জাপানের ভিসা আবেদন স্টেপ বাই স্টেপ
মার্কিন প্রযুক্তি খাতে দক্ষতার সংকট
মার্কিন প্রযুক্তি খাত বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য সংকটের মুখোমুখি। দক্ষ কর্মীর অভাব এই খাতের প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে। মার্কিন শ্রম বিভাগের তথ্য অনুসারে, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রযুক্তি খাতে প্রায় ১২ লাখ কর্মচারীর অভাব দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ক্লাউড কম্পিউটিং, এবং ডেটা অ্যানালিটিক্সের মতো আধুনিক প্রযুক্তি ক্ষেত্রে দক্ষ পেশাদারের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বাড়তি চাহিদা পূরণে প্রতি বছর প্রায় ৩.৫ লাখ নতুন প্রযুক্তিবিদের প্রয়োজন হবে। তবে, আমেরিকায় স্থানীয় দক্ষ কর্মীদের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। এই ঘাটতি পূরণে আমেরিকা ক্রমশ বিদেশি কর্মীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
আরো পড়ুনঃ আমেরিকা b1 b2 ভিসা নিশ্চিত করার কৌশল
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাতে এইচ-১বি ভিসার ভূমিকা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি খাত দ্রুত সম্প্রসারণের পথে এগিয়ে চলেছে। মার্কিন শ্রম বিভাগের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০৩৩ সালের মধ্যে এই খাতে প্রায় ২০ লাখ শূন্যপদের সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের কর্মসংস্থান চাহিদা পূরণে দক্ষ জনবল অত্যাবশ্যক। তবে, স্থানীয় জনশক্তি দিয়ে এই বিশাল চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে উঠবে।
এই প্রেক্ষাপটে, এইচ-১বি ভিসা প্রযুক্তি খাতের জন্য একটি কার্যকর সমাধান হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এটি আন্তর্জাতিক দক্ষ পেশাজীবীদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সুযোগ প্রদান করবে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গ্লোবাল ট্যালেন্ট মার্কেটে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম।
এই ভিসা প্রোগ্রামের সাহায্যে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবনী প্রকল্প বাস্তবায়ন ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। ফলে, এটি কেবল প্রতিষ্ঠানগুলোর লাভজনকতাই বাড়াবে না, বরং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।