বাংলাদেশিদের জন্য থাইল্যান্ডে চালু হচ্ছে ই-ভিসা প্রক্রিয়া!
ভ্রমণপিপাসু বাংলাদেশিদের জন্য আনন্দের সংবাদ নিয়ে আসছে থাইল্যান্ড। কারণ, থাইল্যান্ড সরকার ঘোষণা করেছে, বাংলাদেশি সাধারণ পাসপোর্টধারীদের জন্য ই-ভিসা প্রক্রিয়া চালু করা হবে, যা বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের জন্য শিগগিরই প্রযোজ্য হবে। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী বছরের প্রথম দিকেই এই সুবিধা কার্যকর হবে।
এ বিষয়ে থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার শাখার মহাপরিচালক রাষ্ট্রদূত হ্বরায়ূত পংপ্রাপান্ত সম্প্রতি এক বৈঠকে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
ঐ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেশটির থাইল্যান্ডে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের আলোচনার মাধ্যমে উভয় দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত করা এবং বাংলাদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করার বিষয়ে কথা বলেছেন।
ঘরে বসে সহজেই থাই ভিসা পাবার সুযোগ
থাইল্যান্ডের পর্যটন ও ব্যবসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য এক বড়ো সুযোগ নিয়ে আসতে চলেছে থাই সরকার। সম্প্রতি থাইল্যান্ড দূতাবাস থেকে প্রকাশিত একটি বিজ্ঞপ্তি জানিয়েছে, এখন বাংলাদেশি সাধারণ পাসপোর্টধারীরা ঘরে বসে অনলাইনে থাইল্যান্ডের ভিসা নিতে পারবেন।
এই ই-ভিসা সুবিধা থাইল্যান্ড ইতোমধ্যে তাদের ৬৯টি দূতাবাসের মাধ্যমে চালু করেছে এবং এই তালিকায় শীঘ্রই যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশের নাম।
ই-ভিসা সুবিধা চালু হওয়ায় ভ্রমণপ্রেমী ও ব্যবসায়ীদের জন্য থাইল্যান্ডে প্রবেশের প্রক্রিয়াটি আরও সহজ ও সময় সাশ্রয়ী হবে। ই-ভিসা ব্যবস্থার মাধ্যমে আবেদনকারীরা তাদের মোবাইল বা কম্পিউটারের সাহায্যে ঘরে বসে ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ফলে দূতাবাসে সরাসরি উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে এবং পুরো প্রক্রিয়া হবে আরও ঝামেলামুক্ত।
ই-ভিসা চালুর মাধ্যমে শুধুমাত্র পর্যটন শিল্পে নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশা করা হচ্ছে। থাইল্যান্ডে চিকিৎসা সেবা, পর্যটন, শিক্ষা এবং ব্যবসার জন্য প্রতি বছর অসংখ্য বাংলাদেশি ভ্রমণ করেন। ই-ভিসা সুবিধা চালু হওয়ায় ভ্রমণপ্রিয় বাংলাদেশিদের জন্য এই প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়ে যাবে এবং সময় ও খরচ কমিয়ে দেবে।
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক
বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের মধ্যে সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য নতুন ভিসা অব্যাহতি সুবিধা চালু হতে যাচ্ছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। কনস্যুলার শাখার মহাপরিচালক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, এই ভিসা অব্যাহতি সুবিধাটি আগামী ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এর ফলে বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের সরকারি পাসপোর্টধারীরা ভিসা ছাড়াই একে অপরের দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন।
এই ভিসা অব্যাহতি চুক্তির প্রথম পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিলো গত এপ্রিলে, যখন ব্যাংককে দুই দেশের প্রতিনিধিরা একত্রে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এই সিদ্ধান্ত দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, কারণ এটি সরকারি পর্যায়ে ভ্রমণ সহজ করবে এবং নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করবে।
তবে কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য থাইল্যান্ড-বাংলাদেশ ভিসা অব্যাহতি সুবিধা ২০১৮ সাল থেকেই চালু রয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ককে মজবুত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হয়েছে।
সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য নতুন এই সুবিধা চালুর ফলে বাণিজ্যিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে উন্নতি হবে, যা ভবিষ্যতে উভয় দেশের জন্য অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে আরও বেশি সুবিধা নিয়ে আসবে।
থাইল্যান্ডে চিকিৎসা সেবা ও ডিটিভি ভিসার সুযোগ
বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী থাইল্যান্ডগামী বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের জন্য নতুন সুযোগ আসছে Destination Thailand Visa (ডিটিভি) এর মাধ্যমে।
সম্প্রতি কনস্যুলার শাখার মহাপরিচালক একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন যে, যারা থাইল্যান্ডে উন্নত চিকিৎসা সেবা নিতে ইচ্ছুক, তারা ঢাকা থেকে ডিটিভি ভিসা সংগ্রহ করতে পারবেন। এ ভিসার বিশেষত্ব হলো, এটি পাঁচ বছর মেয়াদ পর্যন্ত কার্যকর থাকবে এবং এর আওতায় প্রত্যেক যাত্রায় ভ্রমণকারীরা ছয় (৬) মাস পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন।
মহাপরিচালক আরও নিশ্চিত করেছেন, ডিটিভি ভিসা পেতে থাই ইমিগ্রেশন কর্তৃক বাংলাদেশ দূতাবাস ব্যাংককের কোনো সুপারিশপত্রের প্রয়োজন হবে না। এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশি নাগরিকদের চিকিৎসা সেবা গ্রহণের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ ও সময় সাশ্রয়ী করে তুলেছে।
থাই ভিসার আবেদনকারীদের জন্য সতর্কবার্তা
সম্প্রতি ঢাকায় অবস্থিত থাই দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত হ্বরায়ূত পংপ্রাপান্ত বাংলাদেশি ভিসা আবেদনকারীদের উদ্দেশ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা প্রদান করেছেন। তিনি জানান, বাংলাদেশি আবেদনকারীদের মাঝে ভিসার জন্য নকল বা মিথ্যা তথ্য জমা দেওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে, যা ভ্রমণকারীদের জন্য ভবিষ্যতে জটিলতার কারণ হতে পারে।
রাষ্ট্রদূত হ্বরায়ূত আবেদনকারীদের সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, যে কেউ এজেন্টের মাধ্যমে আবেদন করলে তাদের নিশ্চিত হওয়া উচিত যে, সংশ্লিষ্ট এজেন্ট সঠিক ও যথাযথ ডকুমেন্ট জমা দিচ্ছে। ভুল ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার মাধ্যমে আবেদনকারীরা নিজেদের ঝুঁকির মুখে ফেলছেন, যা পরবর্তীতে তাদের জন্য কালো তালিকাভুক্তির মতো কঠোর শাস্তির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক ভ্রমণকারী থাইল্যান্ডে পর্যটন ও অন্যান্য উদ্দেশ্যে যান। ভিসা প্রক্রিয়ায় সতর্কতা বজায় রাখা আবেদনকারীদের জন্য শুধু আইনগত প্রয়োজনই নয়, বরং এটি তাদের স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপদ ভ্রমণেরও পূর্বশর্ত। সেজন্য থাই দূতাবাসের এই সতর্কবার্তা বাংলাদেশি ভ্রমণকারীদের মনে করিয়ে দেয়, বৈধ ও সঠিক তথ্য উপস্থাপন করে আবেদন করলে তারা সহজে ভিসা পাবেন এবং নির্বিঘ্নে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।