দিল্লির পরিবর্তে তৃতীয় দেশ থেকে ভিসা নেওয়ার উদ্যোগ
বর্তমানে ভারতের পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় অনেক বাংলাদেশি নাগরিক ভ্রমণ এবং শিক্ষার উদ্দেশ্যে বিপাকে পড়েছেন। শুধুমাত্র জরুরি মেডিকেল ও শিক্ষার্থীদের জন্য সীমিতভাবে তৃতীয় দেশের ভিসা দেওয়া হলেও, ভারতের হাইকমিশন থেকে ভিসা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়েছে। এর ফলে শিক্ষার্থীদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাওয়ার প্রক্রিয়া জটিল হয়ে উঠেছে।
বিশেষ করে, পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোর ভিসার জন্য সাধারণত দিল্লি যেতে হয়, যা বর্তমানে অসম্ভব হয়ে পড়েছে। তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিক্ষার্থীদের সহায়তায় তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ভিসা প্রাপ্তির সুযোগ তৈরি করছে। ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং ইন্দোনেশিয়ায় ভিসা আবেদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
ভিসা সংকটে নতুন পথ যেন সময়ের দাবি
বর্তমানে ভিসা সংকট বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য বড় এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতীয় পর্যটন ভিসা বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন, যা তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জরুরি মেডিকেল ভিসা ও তৃতীয় দেশের সীমিত ভিসা সুবিধা থাকলেও এটি চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল।
ইউরোপের ভিসা প্রক্রিয়াতেও রয়েছে নানা জটিলতা। ঢাকায় পশ্চিম ইউরোপের ভিসা পাওয়া সহজ হলেও পূর্ব ইউরোপের জন্য দিল্লি যেতে হয়, যা ভ্রমণকারীদের জন্য বাড়তি চাপ তৈরি করছে। ৫ আগস্টের পর ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক কর্মজীবী ও শিক্ষার্থীর গন্তব্য নির্ধারণে সীমাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
এই সংকট থেকে উত্তরণে বিকল্প সমাধান খোঁজা সময়ের দাবি। অন্তর্বর্তী সরকার তৃতীয় দেশের মাধ্যমে ভিসা প্রাপ্তির উদ্যোগ নিয়ে ভাবছে, যা ভ্রমণ ও শিক্ষার সুযোগ প্রসারে সহায়ক হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। তবে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না নিলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হারানোর শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। যা সামগ্রিকভাবে দেশের জনগণের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলবে।
ইউরোপের ভিসা প্রসেসিংয়ে বাংলাদেশিদের নতুন সম্ভাবনা
বাংলাদেশিদের জন্য পূর্ব ইউরোপের ভিসা প্রাপ্তি আরও সহজ হচ্ছে। বুলগেরিয়া, রোমানিয়া এবং পোল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে সাধারণত দিল্লি থেকে ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়, যা ছিল সময়সাপেক্ষ ও জটিল। তবে নতুন উদ্যোগে এই বাধাগুলো অনেকাংশে কমানো সম্ভব হয়েছে।
রোমানিয়া এখন বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় গন্তব্য। প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী উচ্চ শিক্ষার জন্য এই অঞ্চলে পাড়ি জমাচ্ছে। ভারতীয় হাইকমিশন ভিসা সীমিত করায় চ্যালেঞ্জ বাড়লেও, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের রোমানিয়া দূতাবাসে ভিসা আবেদন করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বুলগেরিয়ার ভিসার জন্য ভিয়েতনাম, পাকিস্তান এবং কাজাখস্তানের দূতাবাসেও আবেদন প্রক্রিয়া চালু রয়েছে।
দিল্লিকে এড়িয়ে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা প্রশংসনীয়। এরই মধ্যে ৮৬ জন শিক্ষার্থী সফলভাবে ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়ার দূতাবাস থেকে ভিসার অনুমোদন পেয়েছেন। এই উদ্যোগ পূর্ব ইউরোপে শিক্ষার্থী ও কর্মীদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বাড় উন্মোচন করছে।
ইউরোপের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকারের নতুন উদ্যোগ
বাংলাদেশ সরকার ইউরোপের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে, যা দেশের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণকে আরও সাশ্রয়ী ও ঝামেলামুক্ত করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এমন একটি ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করছে, যেখানে দিল্লি এড়িয়ে তৃতীয় কোনো দেশের মাধ্যমে সরাসরি ভিসা প্রাপ্তি সম্ভব হবে। পাশাপাশি, ক্রোয়েশিয়া, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়ার মতো দেশের ভিসা যাতে বাংলাদেশ থেকেই পাওয়া যায়, সেই বিষয়ে আলোচনা চলছে।
পররাষ্ট্র সচিব এম জসীম উদ্দিন এই লক্ষ্যে ইউরোপের তিনটি দেশ—জার্মানি, চেক রিপাবলিক এবং বসনিয়া-হার্জেগোভিনায় সফর শুরু করেছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার উপায় খুঁজে বের করা। বিশেষ করে চেক রিপাবলিক এবং বসনিয়া হার্জেগোভিনার সঙ্গে এই বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জনের প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এই উদ্যোগ ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আরও মজবুত করবে এবং দেশের নাগরিকদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। সরকারের এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক ভ্রমণে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভারতের ভিসা নিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি ও উদ্যোগ
ভারত ভ্রমণের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বর্তমানে ভিসা প্রক্রিয়ায় কিছু বাধা দেখা দিয়েছে। জনবল সংকটের কারণে ভারতীয় হাইকমিশন ট্যুরিস্ট ভিসার আবেদন সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে। তবে, নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। জরুরি প্রয়োজনে, বিশেষ করে চিকিৎসার জন্য মেডিকেল ভিসা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া, ভারতের মাধ্যমে তৃতীয় কোনো দেশে যাত্রা করতে চাওয়া ব্যক্তিদের জন্যও বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভারতীয় হাইকমিশন জানিয়েছে, তারা চায় যাত্রীরা যেন সহজেই ভারত ভ্রমণ করতে পারে আর এই লক্ষ্যে তারা জরুরি প্রয়োজনীয় ভিসা যত দ্রুত সম্ভব প্রদান করার চেষ্টা করছে।
এদিকে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের তৃতীয় দেশে ভিসা পাওয়ার প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য বিকল্প দেশ গুলোতে আবেদন করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি, ভারতের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করার জন্য ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ চলছে। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনবল সংকট কাটিয়ে কার্যক্রম স্বাভাবিক হলে বিভিন্ন ভিসা প্রক্রিয়া পুনরায় চালু হবে।
আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা
পরিশেষে বলা যায়, ভারত ভ্রমণের জন্য ভিসা প্রক্রিয়ায় সাময়িক বাধা থাকলেও, জরুরি প্রয়োজনে ভিসা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ভারতীয় হাইকমিশন যৌথভাবে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছে। তাই আশা করা যায় শীঘ্রই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। আর স্বাভাবিক হলেই পূর্বের মতো বাংলাদেশি নাগরিকদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজ হয়ে উঠবে।