কুয়েতে কর্মসংস্থানের সুযোগ, জেনে নিন কীভাবে পাবেন ওয়ার্কিং ভিসা
মধ্যপ্রাচ্যের মরুভূমির মণি কুয়েত আবারও বিদেশি শ্রমিকদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। দীর্ঘদিনের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে, কুয়েত সরকার অস্থায়ী সরকারি প্রকল্প গুলোর জন্য ওয়ার্কিং ভিসা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি দেশটির অর্থনীতি এবং কর্মসংস্থানের দৃশ্যপটে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কুয়েতের ভিসা স্থগিতের পেছনে কারণ বিশ্লেষণ
কয়েক বছর আগে কুয়েতে ভিসা প্রদান স্থগিতের ঘোষণা দেশটিতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলো। বিশেষ করে, বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের প্রবাসীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিলো। কিন্তু কেন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? আসুন, এই বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করি।
কুয়েতে অভিবাসনের বৃদ্ধি
কুয়েত একটি ছোট দেশ হলেও, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক এখানে আসতেন। তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে দেশটির অর্থনৈতিক উন্নতি হওয়ায় অবকাঠামো উন্নয়ন, বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সহো বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক কর্মীদের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিলো। ফলে অভিবাসীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছিলো।
চাপ সৃষ্টি
বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর আগমনের ফলে কুয়েতে জনসংখ্যা ঘনত্ব বেড়ে যায়। এর ফলে দেশটিতে বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ইত্যাদি সুযোগ-সুবিধা সংকট দেখা দিতে শুরু করে। অর্থনীতির ওপর চাপ পড়ে এবং দেশীয় কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে যায়।
সরকারের সিদ্ধান্ত
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় কুয়েত সরকার সিদ্ধান্ত নেয়, দেশে অভিবাসনের হার কমাতে হবে। সেই লক্ষ্যে তারা সব ধরনের ভিসা প্রদান স্থগিত করে। এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক প্রবাসীর জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
আরো পড়ুনঃ কুয়েতের রাজধানীর নাম কি?
কেন আবার ভিসা চালু হলো?
কুয়েত ভিসা স্থগিত থাকার মূল কারণ ছিলো দেশটিতে কর্মীদের সংখ্যা অতিরিক্ত বৃদ্ধি। এই অতিরিক্ত জনসংখ্যা দেশের অর্থনীতি ও সামাজিক ব্যবস্থার উপর চাপ সৃষ্টি করছিলো। তবে সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে।
এছাড়াও করোনা মহামারির কারণে বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কুয়েতেও কর্মসংস্থানের হার কমে যায়। অনেক প্রবাসী কর্মী দেশে ফিরে যাওয়ায় দেশটিতে কর্মী সংকট দেখা দিতে শুরু করে।
বিশেষ করে, অস্থায়ী সরকারি প্রকল্প গুলোতে কর্মীদের অভাব দেখা দেয়। এই অবস্থা বিবেচনা করেই সরকার আবারও ওয়ার্কিং ভিসা চালু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আরো পড়ুনঃ কুয়েতের মুদ্রার নাম কি?
কুয়েতের নতুন ওয়ার্কিং ভিসা কাদের জন্য?
কুয়েত সরকার সম্প্রতি একটি নতুন ওয়ার্কিং ভিসা চালু করেছে, যা দেশটিতে অস্থায়ী প্রকল্প গুলোতে কাজ করার জন্য বিদেশি শ্রমিকদের নতুন সুযোগ করে দিয়েছে। তবে এই ভিসা সবার জন্য নয়। আসুন জেনে নেই কাদের জন্য এই ভিসাটি প্রযোজ্য
এই নতুন ওয়ার্কিং ভিসা শুধুমাত্র সেইসব বিদেশি শ্রমিকদের জন্যই প্রযোজ্য যারা কুয়েত সরকারের বিভিন্ন অস্থায়ী প্রকল্পে কাজ করতে চান। এই প্রকল্প গুলো সাধারণত এক বছরের কম সময়ের জন্য হয়। অর্থাৎ, যারা কুয়েতে দীর্ঘমেয়াদী কর্মসংস্থানের স্বপ্ন দেখছেন, তাদের জন্য এই ভিসাটি উপযুক্ত নয়।
কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন (আনুমানিক)
কুয়েতে সর্বনিম্ন বেতন কাজের ধরনের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, কিছু কাজের জন্য সর্বনিম্ন বেতন ৩৫,০০০ থেকে ৪০,০০০ টাকা এবং কিছু কাজের জন্য ৫০,০০০ থেকে ৬০,০০০ টাকা হতে পারে। তবে এই বেতনের পরিমানটি কেবল আনুমানিক ধারণা। বাস্তবিক বেতন বিভিন্ন কারণের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়ে থাকে।
কুয়েত কোম্পানি ভিসা কিভাবে পাবেন?
বর্তমানে আমাদের দেশ থেকে অনেকেই কুয়েতে কোম্পানি ভিসা নিতে চায়। তো তাদের জন্য কোম্পানি ভিসা পাওয়ার দুটি প্রধান উপায় রয়েছে। সেই উপায় গুলো হলো,
০১-সরকারিভাবে
বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব কর্মসংস্থান ও পরিষেবা বোর্ড, বোয়েসেলের মাধ্যমে কোম্পানি ভিসা পাওয়া সম্ভব। বোয়েসেল নিয়মিত কুয়েতের বিভিন্ন কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী ভিসার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। আপনি বোয়েসেলের ওয়েবসাইট বা অফিসে যোগাযোগ করে এই বিজ্ঞপ্তি গুলো দেখতে পারবেন এবং আবেদন করতে পারেন।
০২-বেসরকারিভাবে
বিশ্বস্ত এবং পরিচিত এজেন্সির মাধ্যমে কোম্পানি ভিসা নিতে পারবেন। অনেক এজেন্সি কুয়েতের বিভিন্ন কোম্পানির সাথে যোগাযোগ রাখে এবং তাদের প্রয়োজনীয় জনবল সরবরাহ করে। আপনি যদি নিজে আবেদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত না হন, তাহলে এ ধরনের কোনো এজেন্সির সাহায্য নিতে পারবেন।
আপনার জন্য আমাদের কিছুকথা
কুয়েতের নতুন ওয়ার্কিং ভিসা নীতি বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি নতুন দ্বার উন্মুক্ত করেছে। তবে, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরি। ভিসা আবেদনের আগে আমাদের সম্পূর্ণ তথ্য সংগ্রহ এবং অভিজ্ঞদের সাথে পরামর্শ নেওয়া উচিত।