আমিরাত দিচ্ছে তিন ক্যাটাগরিতে গোল্ডেন ভিসা
সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) তাদের গোল্ডেন ভিসা প্রোগ্রামের পরিধি আরও বাড়িয়ে নতুন তিনটি ক্যাটাগরি যুক্ত করেছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী দক্ষ ও প্রতিভাবান ব্যক্তিদের আকৃষ্ট করা এবং তাদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের সুবিধা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে শিক্ষা, প্রযুক্তি এবং বিলাসবহুল জীবনযাত্রার ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞদের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ।
গোল্ডেন ভিসা মূলত উচ্চ দক্ষতা সম্পন্ন পেশাজীবী, উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী এবং বিশেষ প্রতিভাধর ব্যক্তিদের জন্য দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের অনুমতি প্রদান করে। নতুন ক্যাটাগরিগুলোর সংযোজনের ফলে এখন আরও বিস্তৃত পরিসরে ব্যক্তিরা এই সুবিধার আওতায় আসতে পারবেন।
আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা কি?
আরব আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা হল দীর্ঘমেয়াদি রেসিডেন্সি প্রোগ্রাম, যা বিনিয়োগকারী, উদ্যোক্তা, বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন পেশাজীবী এবং মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য চালু করা হয়েছে। এই ভিসাধারীরা দীর্ঘ সময় ধরে আমিরাতে বসবাস, কাজ এবং শিক্ষা গ্রহণের সুবিধা পান, যা তাদের স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করে।
গোল্ডেন ভিসার মূল আকর্ষণ হলো এর দীর্ঘমেয়াদি মেয়াদ, সাধারণত ৫ থেকে ১০ বছর, যা নিয়মিত নবায়ন করা যায়। বিশেষত ব্যবসায়ী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, গবেষক এবং উদ্ভাবকদের জন্য এটি একটি স্বপ্নের সুযোগ। এই ভিসার মাধ্যমে পরিবারসহ আমিরাতে থাকার সুবিধা পাওয়া যায়, যা বিনিয়োগ ও ক্যারিয়ার গড়ার ক্ষেত্রে অনন্য সুবিধা প্রদান করে।
সরকার নির্দিষ্ট মানদণ্ড অনুযায়ী যোগ্য ব্যক্তিদের এই ভিসা প্রদান করে, যা আমিরাতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনী সংস্কৃতিকে আরও সমৃদ্ধ করে। ফলে, যারা ক্যারিয়ার ও ব্যবসার উন্নতির পাশাপাশি নিরাপদ ভবিষ্যৎ গড়তে চান, তাদের জন্য এটি এক আকর্ষণীয় সুযোগ।
আমিরাত দিচ্ছে তিন ক্যাটাগরিতে গোল্ডেন ভিসা
গোল্ডেন ভিসা প্রোগ্রামের এই সম্প্রসারণ শুধু ব্যক্তিগত সুবিধাই বাড়ায়নি, বরং এটি আমিরাতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দক্ষ পেশাজীবী এবং বিত্তশালী ব্যক্তিদের আগমন দেশটির বিভিন্ন খাতে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। বিশেষ করে প্রযুক্তি এবং শিক্ষা খাতে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিভাবানদের অংশগ্রহণ আমিরাতকে বৈশ্বিক উদ্ভাবন ও জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নেবে।
০১.শিক্ষক ও শিক্ষাবিদ (গোল্ডেন ভিসা)
সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) শিক্ষাখাতের পেশাদারদের জন্য এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ২০২৪ সালের অক্টোবরে দুবাইয়ের জ্ঞান ও মানব উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (KHDA) শিক্ষকদের জন্য গোল্ডেন ভিসার সুযোগ চালু করেছে। এটি এমন এক দীর্ঘমেয়াদী ভিসা, যা শুধু শিক্ষকদেরই নয়, তাদের পরিবারের সদস্যদেরও স্থিতিশীল ভবিষ্যৎ গঠনের সুযোগ দেবে।
এই ১০ বছরের পুনর্নবীকরণযোগ্য ভিসাটি মূলত বেসরকারি শিক্ষাখাতে অসামান্য অবদান রাখা শিক্ষকদের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র (ECSCs), স্কুল এবং উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে (HEIs) কর্মরত শিক্ষকরা এই বিশেষ সুবিধার জন্য বিবেচিত হবেন। বিশেষ করে, যারা নতুন উদ্ভাবন, শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন, তাদের এই ভিসার আওতাভুক্ত করা হবে।
০২.দুবাইয়ের নতুন গেমিং ভিসা
গেমিং ও ই-স্পোর্টস শিল্পকে বৈশ্বিকভাবে আরও এগিয়ে নিতে দুবাই চালু করেছে ‘দুবাই গেমিং ভিসা’, যা ১০ বছরের গোল্ডেন ভিসা হিসেবে প্রদান করা হচ্ছে। এই উদ্যোগ ‘দুবাই প্রোগ্রাম ফর গেমিং – ২০৩৩’-এর অংশ, যা দুবাইকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ গেমিং ও ই-স্পোর্টস কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়ক হবে।
দুবাইয়ের ক্রাউন প্রিন্স শেখ হামদান বিন মোহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাখতুম এই দীর্ঘমেয়াদি ভিসাটি চালু করেছেন, যা পেশাদার গেমার, ডেভেলপার ও ই-স্পোর্টস সংশ্লিষ্টদের জন্য এক বড় সুযোগ এনে দিচ্ছে। গেমিং খাতে দক্ষ ও প্রতিভাবান পেশাজীবীদের আকৃষ্ট করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা এই শিল্পের অভূতপূর্ব বিকাশে ভূমিকা রাখবে।
০৩.বিলাসবহুল ইয়ট মালিকদের জন্য আমিরাতের গোল্ডেন ভিসা
সংযুক্ত আরব আমিরাত (UAE) নতুন করে তিনটি ক্যাটাগরিতে গোল্ডেন ভিসার সুযোগ চালু করেছে, যার মধ্যে অন্যতম হলো বিলাসবহুল ইয়ট মালিকদের জন্য বিশেষ গোল্ডেন ভিসা। এই উদ্যোগটি এসেছে ‘আবু ধাবি গোল্ডেন কুয়ে’ প্রোগ্রামের আওতায়, যা দীর্ঘমেয়াদী আবাসনের সুযোগ তৈরি করে উচ্চ-মূল্যের বিনিয়োগকারীদের জন্য।
এই বিশেষ ভিসার আওতায় ৪০ মিটার বা তার চেয়ে দীর্ঘ ব্যক্তিগত ইয়টের মালিকরা ১০ বছরের গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। শুধুমাত্র ইয়ট মালিকরাই নন, বরং ইয়ট নির্মাণ শিল্পের শেয়ারহোল্ডার, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, বড় এজেন্ট, সেবা প্রদানকারী এবং বিমা সংস্থার কর্মীরাও এই সুযোগের আওতায় আসতে পারেন। এমনকি মনোনীত ব্যক্তিদের পরিবারও এই ভিসার মাধ্যমে আমিরাতে বসবাসের সুবিধা পাবেন, যা তাদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দেবে।
গোল্ডেন ভিসার সুবিধাসমূহ
নতুন সংযোজিত ক্যাটাগরিগুলোর মধ্যে রয়েছে শিক্ষা, যা মেধাবী শিক্ষার্থী, গবেষক ও শিক্ষাবিদদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বিশ্বমানের শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া, প্রযুক্তি খাতে বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন ব্যক্তি ও উদ্যোক্তাদের জন্যও ভিসা সুবিধা সম্প্রসারিত করা হয়েছে, যা দেশটির ডিজিটাল উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করবে।
তৃতীয় ক্যাটাগরি হিসেবে বিলাসবহুল জীবনযাত্রার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও ব্যবসায়ীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা উচ্চমানের পরিষেবা, ফ্যাশন ও প্রিমিয়াম লাইফস্টাইল খাতে অবদান রাখেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ সুযোগ
আমিরাত বরাবরই তাদের উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। নতুন ক্যাটাগরির আওতায় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষাবিদ, গবেষক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যতিক্রমী সাফল্য অর্জন করা ব্যক্তিরা সহজেই গোল্ডেন ভিসার জন্য আবেদন করতে পারবেন। বিশেষ করে যারা ভবিষ্যতের শিক্ষাব্যবস্থা উন্নত করতে ভূমিকা রাখতে পারেন, তাদের জন্য এটি একটি অনন্য সুযোগ।
প্রযুক্তিখাতে বিস্তৃত সুযোগ
বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন কেন্দ্র হিসেবে আমিরাত নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করছে। নতুন ক্যাটাগরির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), ব্লকচেইন, সাইবার সিকিউরিটি, ক্লাউড কম্পিউটিং, এবং অন্যান্য উদ্ভাবনী প্রযুক্তির বিশেষজ্ঞদের দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের সুবিধা দেওয়া হবে। ফলে বিশ্বমানের প্রযুক্তিবিদ ও উদ্ভাবকদের জন্য আমিরাত একটি আদর্শ গন্তব্যে পরিণত হচ্ছে।
বিলাসবহুল জীবনযাত্রায় বিনিয়োগকারীদের অগ্রাধিকার
সংযুক্ত আরব আমিরাত বিশ্বের অন্যতম বিলাসবহুল জীবনযাত্রার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। নতুন ক্যাটাগরির আওতায় বিলাসবহুল রিয়েল এস্টেট বিনিয়োগকারী, শিল্প উদ্যোক্তা এবং উচ্চ সম্পদের মালিকদের দীর্ঘমেয়াদী বসবাসের অনুমতি দেওয়া হবে। এতে শুধু বিনিয়োগকারীরা নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সংযুক্ত হতে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোও উপকৃত হবে।
এই সম্প্রসারিত গোল্ডেন ভিসা প্রোগ্রাম আমিরাতকে আরও আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত করবে এবং বৈশ্বিক প্রতিভা ও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি শুধু ব্যক্তিগত সুযোগ নয়, বরং আমিরাতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ। গোল্ডেন ভিসা প্রক্রিয়া আরও সহজ করল আমিরাত।
দুবাই বাংলাদেশ এম্বাসি মোবাইল নাম্বার
দুবাইতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেট জনারেলের অফিসটি বাংলাদেশী নাগরিকদের সেবা প্রদান করে এবং তাদের প্রয়োজনীয় কনস্যুলেট সার্ভিস সহজেই পাওয়া যায়। এটি আল ওয়ুহেইদা, দেইরা এলাকায় অবস্থিত এবং অফিসের ঠিকানা হলো ভিলা নম্বর ৩৬ ও ১৪৫, আব্দুল্লাহ হুসেন আল মালিক ভিলা, ১২৩/৩ স্ট্রীট, আবু হাইল রোড, দুবাই, ইউএই। পোস্টাল কোড হলো ৪৩৩৬।
যে কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে বা কনস্যুলেট সম্পর্কিত বিষয়গুলোর জন্য, বিশেষ করে পাসপোর্ট, ভিসা এবং অন্যান্য ডকুমেন্টস সংক্রান্ত সহায়তার জন্য, যোগাযোগের জন্য একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর রয়েছে: +৯৭১ ৫০ ৫০৫৫৮৩৪। আপনি এই নম্বরে দ্রুত এবং সহজভাবে সহায়তা পেতে পারেন।
অফিসের প্রধান টেলিফোন নম্বর দুটি হলো: 00971-4-2388199 এবং 00971-4-2651116। এই নম্বরে আপনি সরাসরি কল করে বিভিন্ন কনস্যুলেট সেবার বিষয়ে বিস্তারিত জানার সুযোগ পাবেন।
বাংলাদেশী নাগরিকদের মানবিক সহায়তার জন্য, আরও দুটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর পাওয়া যাবে: +৯৭১ ৫০ ৮১৬৮২৫৩ এবং +৯৭১ ৫০ ৮১৬৮৩৬৩। এই নম্বরগুলোর মাধ্যমে মানবিক সহায়তা বা জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত সাহায্য নেয়া সম্ভব। তাছাড়া, অফিসের অফিসিয়াল ইমেইল ঠিকানা হলো mission.dubai@mofa.gov.bd। এই ইমেইলে লিখে আপনি যেকোনো ধরনের তথ্য বা সহায়তার জন্য যোগাযোগ করতে পারবেন।