নামজারি খতিয়ান যাচাই করার সহজ উপায়
Easy way to verify Namjari Khatian: সহজ কথায় বলতে গেলে, যখন কোনো একটি নির্দিষ্ট জমি উত্তরাধিকার সূত্রে কিংবা সেই জমি ক্রয় বা বিক্রয়ের মাধ্যমে যখন জমির নতুন মালিকানার নিবন্ধন করা হয়। তখন সেই নতুন মালিকানার নাম নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া কে বলা হয়, নামজারি খতিয়ান।
আর বর্তমান সময়ে আপনি বিভিন্ন উপায়ে নামজারি খতিয়ান যাচাই করে নিতে পারবেন। সেইসাথে এখন অনলাইন থেকেও খুব সহজে নামজারি খতিয়ান যাচাই করা যায়। তবে তার জন্য আপনাকে কি কি নিয়ম ফলো করতে হবে। এবার আমি আপনাকে ধাপে ধাপে সেই নিয়ম গুলো দেখিয়ে দিবো।
নামজারি খতিয়ান বলতে কি বুঝায়?
আমরা সকলেই জানি যে, প্রত্যেকটি জমির নির্দিষ্ট একজন মালিকানা থাকে। তো কোনো কারণে যদি সেই জমির মালিকানা পরিবর্তন করা হয় এবং পুরাতন মালিকানার নাম পরিবর্তন করে নতুন মালিকানার নাম যুক্ত করা হয়। তখন সেই মালিকানার নাম পরিবর্তন করার পুরো প্রক্রিয়াকে বলা হয়, নামজারি খতিয়ান।
তবে এখন আপনি হয়তবা ভাবছেন যে, কেন একটি নির্দিষ্ট জমির মালিকানা পরিবর্তন করা হয়। তো এমন অনেক কারণ রয়েছে, যে কারণ গুলোর জন্য জমির মালিকানার নাম পরির্তন করা দরকার হয়। আর সেই কারণ গুলো হলো,
- উত্তরাধীকার সূত্রে জমি বিক্রয় করা
- নির্দিষ্ট জমি দান করে দেওয়া
- বিভিন্ন হস্তান্তর এর কারণে
মূলত উপরের এই কারণ গুলোর জন্য জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়ে থাকে। আর যখন এই কারণ গুলোর জন্য জমির মালিকানার নাম পরিবর্তন করা হয়। তখন সেই কাজের পুরো প্রক্রিয়া কে বলা হয়, নামজারি খতিয়ান।
কিভাবে নামজারি খতিয়ান যাচাই করা যায়?
তো এবার আমাদের জানতে হবে যে, কিভাবে নামজারি খতিয়ান যাচাই করা যায়। আর আপনি মোট দুইটি উপায়ে নামজারি খতিয়ান যাচাই করে নিতে পারবেন। সেগুলো হলো,
- সরাসরি ভূমি অফিস থেকে নামজারি খতিয়ান যাচাই
- ভূমি অফিস এর ওয়েবসাইট থেকে নামজারি খতিয়ান যাচাই
আপনি চাইলে উপরের দুইটি উপায় ফলো করে নামজারি খতিয়ান যাচাই করে নিতে পারবেন। তবে এবার আমি আপনাকে অনলাইনে নামজারি খতিয়ান যাচাই করার পদ্ধতি গুলো দেখিয়ে দিবো। যেন আপনি খুব সহজেই অনলাইন থেকে আপনার নামজারি খতিয়ান যাচাই করে নিতে পারেন।
অনলাইনে নামজারি খতিয়ান বের করার নিয়ম
আমি উপরের আলোচনাতে আপনাদের একটা কথা বলেছি। সেটি হলো, বর্তমানে আপনি চাইলে অনলাইন থেকে নামজারি খতিয়ান যাচাই করে নিতে পারবেন। আর অনলাইন থেকে নামজারি খতিয়ান যাচাই করার জন্য আপনাকে আসলে কি কি কাজ করতে হবে। সেগুলো জানতে হলে নিচে দেখানো পদ্ধতি গুলোতে নজর দিন। যেমন,
নামজারি খতিয়ান অনলাইন
- সবার প্রথমে আপনাকে বাংলাদেশ ই-পর্চা এর মূল ওয়েবসাইটে যেতে হবে।
- নতুবা আপনি এখানে ক্লিক করেও উক্ত ওয়েবসাইট এর মধ্যে প্রবেশ করতে পারবেন।
- তারপর আপনার সামনে অনেক গুলো অপশন আসবে। আপনাকে সরাসরি “নামজারি খতিয়ান” এর মধ্যে ক্লিক করতে হবে।
- তার ঠিক নিচে এবার আপনাকে আপনার বিভাগ সিলেক্ট করে দিতে হবে।
- এবার আপনার বিভাগ এর আওতায় যে সকল জেলা আছে। সেই জেলা গুলোর নাম দেখতে পারবেন। তো আপনি আপনার নিজস্ব জেলা সিলেক্ট করে দিন।
- জেলা সিলেক্ট করার পর এবার আপনি আপনার জেলার সকল থানার নাম দেখতে পারবেন। তাই আপনি এবার আপনার থানা সিলেক্ট করে দিন।
- তারপর আপনাকে আপনার মৌজা সিলেক্ট করতে হবে।
- তার ঠিক ডানপাশে আপনি খতিয়ান নম্বর দেওয়ার একটি অপশন দেখতে পারবেন। সেখানে আপনার খতিয়ান এর নম্বর টি প্রবেশ করুন।
- অথবা উক্ত অপশন এর মধ্যে জমির মালিকের নাম লিখেও সার্চ করা যাবে।
তো এখন যদি আপনি “খুজুন” নামক অপশন এর মধ্যে ক্লিক করেন। তাহলে আপনি আপনার নামজারি খতিয়ান যাচাই করে নিতে পারবেন।
আরো পড়ুনঃ rs খতিয়ান বের করার নিয়ম | আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান | www.land.gov bd
নামজারি খতিয়ান অনুসন্ধান
নামজারি খতিয়ান করতে কতদিন সময় লাগে?
স্বাভাবিক ভাবে আপনি যদি সকল ডকুমেন্টস দিয়ে সঠিকভাবে নামজারি খতিয়ান এর কাজ করতে পারেন। তাহলে আপনার নামজারি খতিয়ান করতে সর্বোচ্চ ২৮ দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। কিন্তুু যদি আপনার কাগজপত্রে কোনো ধরনের গড়মিল থাকে। তাহলে আপনার এর থেকেও বেশি সময় লাগবে। তাই নামজারি খতিয়ান করার জন্য অবশ্যই আপনার হাতে থাকা ডকুমেন্টস গুলো নির্ভুল হতে হবে।
আরো পড়ুনঃ জমির রেকর্ড কত বছর পর পর হয়?
খারিজ না করলে কি কি সমস্যা হয়?
যদি আপনি খারিজ না করেন, তাহলে কিন্তুু পরবর্তী সময়ে আপনাকে নানা বিপদের মধ্যে পড়তে হবে। কেননা, সাময়িক সময়ের জন্য আপনি সেই জমির দখল নিয়ে থাকলেও। যখন আপনার উত্তরাধীকার সূত্রে যারা আসবে, তারা উক্ত জমি থেকে বঞ্চিত হওয়ার আশংকা থাকবে।
এছাড়াও আপনি হয়ত ভালো করেই জানেন যে, এখন আর্থিক সংস্থা গুলো লোন দেওয়ার আগে জমি জমার কাগজপত্র জমা নেয়। তো খতিয়ান ছাড়া কিন্তুু আপনাকে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান লোন দিতে আগ্রহী হবেনা। এগুলো ছাড়াও খারিজ না থাকলে আপনার নানা প্রকারের সমস্যা দেখা দিবে।
খতিয়ান আর নামজারি কি একই?
আমাদের মধ্যে এমন অনেক মানুষ আছেন। যারা আসলে জানতে চায় যে, খতিয়ান আর নামজারি কি একই নাকি ভিন্ন। তো তাদের উদ্দেশ্যে বলবো যে, খতিয়ান সংশোধন করার প্রক্রিয়াকে বলা হয়, নামজারি। কেননা, যখন কোনো একটি নির্দিষ্ট জমির মালিকানা পরিবর্তন হয়। তখন সেই খতিয়ান এর মধ্যে থাকা জমির মালিকের নাম সংশোধন করার দরকার পড়ে।
তবে এই নামজারির বিষয়টাকে আরো একটু আলাদা ভাবে উল্লেখ করা যায়। যেমন, কোনো নির্দিষ্ট জমি যখন বৈধ পথ অনুসরন করে একজন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান মালিকানা অর্জন করে। আর যখন সেই জমির রেকর্ড সরকারি ভাবে সংশোধন করা হয়। তখন সেই রেকর্ড হালনাগাদ করার সম্পূর্ন প্রক্রিয়া কে বলা হবে, নামজারি।
জমা একত্রীকরন কাকে বলে?
যেহুতু আপনি জমির নামজারি খতিয়ান সম্পর্কে জানতে এসেছেন। সেহুতু আপনার জমা একত্রীকরন সম্পর্কেও জেনে রাখতে হবে। কেননা, আপনি একজন সাধারন ব্যক্তি হিসেবে আপনার খন্ড খন্ড জমির খতিয়ান গুলোকে একটি মাত্র খতিয়াতে যুক্ত করবেন। এবং সেই খতিয়ান টি যখন আপনি রেকর্ড এর মধ্যে সংশোধন করবেন। তখন তাকে বলা হবে, জমা একত্রীকরন।
তো এই ক্ষেত্রে আপনাকে আপনার ভিন্ন ভিন্ন জমির খতিয়ান নিয়ে ঘুরতে হবেনা। বরং আপনি আপনার সকল ভিন্ন জমির খতিয়ান গুলো একটি মাত্র খতিয়ান এর মধ্যে যুক্ত করতে পারবেন। আর উক্ত কাজটি করা হয়ে থাকে প্রজাস্বত্ব আইন এর ১১৬ ধারা অনুযায়ী।
নামজারি খতিয়ান যাচাই নিয়ে আমাদের শেষকথা
প্রিয় পাঠক, এই ওয়েবসাইট এর মধ্যে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আর্টিকেল পাবলিশ করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় আজকে আমি আপনাকে নামজারি খতিয়ান যাচাই করার প্রক্রিয়া গুলো দেখিয়ে দিয়েছি। আর আপনি যদি আজকের দেখানো পদ্ধতি গুলো ফলো করেন। তাহলে আপনি খুব সহজেই নামজারি খতিয়ান বের করতে পারবেন।
আর আপনি যদি ভূমি সংক্রান্ত আরো কোনো অজানা তথ্য জানতে চান। তাহলে অবশ্যই নিচে কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন। ধন্যবাদ, এতক্ষন ধরে আমাদের সাথে থাকার জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।