ভারত-বাংলাদেশ বেনাপোল বন্দরের পতন

২০২৪ সালে ভারতীয় ভিসা সীমিতকরণের কারণে বেনাপোল বন্দর দিয়ে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি কমে গেছে। ২০২৩ সালে যেখানে এ বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করেছিল ২২ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩১ জন পাসপোর্টধারী, সেখানে ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৩ জনে।

ভারতীয় ভিসা নিয়ে চলমান জটিলতার ফলে যাত্রীদের যাতায়াতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে, এই সীমাবদ্ধতার কারণে যারা নিয়মিত ভারত সফরে যেতেন, তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। এর প্রভাব বেনাপোল বন্দরেও স্পষ্টভাবে দেখা গেছে। একদিকে যাত্রীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বন্দরের সার্বিক কার্যক্রমে প্রভাব পড়েছে, অন্যদিকে এই পরিস্থিতি স্থানীয় ব্যবসা ও টুরিজম শিল্পেও প্রভাব ফেলেছে।

এমন পরিস্থিতিতে, দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির জন্য ভবিষ্যতে ভিসা পদ্ধতি সহজী করণ করার প্রয়োজনীয়তা আরো বেড়ে গেছে। তবে, এটি শুধু বেনাপোল বন্দর নয়, বরং সমগ্র দুই দেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলোর জন্য একটি বড় ধরনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পাসপোর্টধারী যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে

২০২৪ সালে বেনাপোল বন্দর দিয়ে দুই দেশের মধ্যে যাতায়াত করা পাসপোর্টধারী যাত্রী সংখ্যা উল্লেখ যোগ্য ভাবে কমেছে। গত বছর, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে প্রায় ২ লাখ ৩৩ হাজার যাত্রী কমেছে, যার পেছনে ভারতের ভিসা সীমিতকরণের প্রভাব স্পষ্ট। 

২০২৪ সালে বেনাপোল বন্দর দিয়ে মোট ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৩ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের যাত্রী সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ ৬৫ হাজার ১১০ জন, ভারতের যাত্রী সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪১৩ জন, এবং অন্যান্য দেশের যাত্রী সংখ্যা ছিল ২ হাজার ৪৯০ জন।

গত বছর ২০২৩ সালে এই সংখ্যা ছিল ২২ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩১ জন, যেখানে বাংলাদেশি যাত্রী সংখ্যা ছিল ১৮ লাখ ৮৪ হাজার ২১৫ জন। সুতরাং, ভারতীয় ভিসা সীমিত করার কারণে বেনাপোল বন্দরের যাত্রী সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা এই সীমান্তের মধ্যে ভ্রমণের জন্য অন্যতম বড় প্রভাব ফেলেছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ভিসা প্রদান পদ্ধতির কঠোরতা এবং অন্যান্য প্রশাসনিক বাধার ফলে ভ্রমণের সংখ্যা কমে গেছে, বিশেষ করে ভারতীয় যাত্রীদের ক্ষেত্রে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক এবং সীমান্তে যাতায়াতের উপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলছে, যা আগামী দিনগুলোতে আরো জোরালো হয়ে উঠবে।

বেনাপোল-পেট্রাপোল রুটের যাত্রী কমেছে দুই লাখেরও বেশি

ভারতীয় ভিসা সীমিত করায় বেনাপোল-পেট্রাপোল রুটের যাত্রী পরিবহনে নজিরবিহীন হ্রাস দেখা দিয়েছে। এক বছরে এ পথে যাত্রী সংখ্যা কমেছে দুই লাখেরও বেশি। চিকিৎসা, ব্যবসা এবং অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য যাতায়াতকারী পাসপোর্টধারীদের জন্য এই রুট ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান জানিয়েছেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন এই রুট দিয়ে গড়ে আট থেকে দশ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতেন।

কিন্তু গত বছরের জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে ভারতীয় দূতাবাস ভিসা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়। যদিও পরবর্তীতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়, তবুও ভারত এখনো ভিসা প্রক্রিয়া আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনেনি। 

এর ফলে, চিকিৎসার প্রয়োজনে ভারতে যাওয়া রোগী, ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্যবসায়ী এবং অন্যান্য যাত্রীদের যাতায়াতে বড় ধরনের বাধা তৈরি হয়েছে।

এই সীমাবদ্ধতার কারণে বেনাপোল বন্দরের কার্যক্রমে আর্থিক প্রভাব পড়েছে এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব দেখা দিয়েছে। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় বন্দর সংলগ্ন ব্যবসা-বাণিজ্যেও মন্দা দেখা দিয়েছে। 

দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই সংকট দ্রুত সমাধানের জন্য উভয় দেশের সরকারের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। মানুষের যাতায়াতের সুবিধা পুনরুদ্ধার করতে এবং দুই দেশের সম্পর্ক উন্নত করতে এই সমস্যার সমাধান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

দুই দেশের ভ্রমণ ও অর্থনৈতিক ক্ষতি

ভারতীয় ভিসা সীমিত করার প্রভাব দুই দেশের ভ্রমণ খাত এবং অর্থনীতিতে গভীর ছাপ ফেলেছে। বেনাপোল বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে পাসপোর্টধারী যাত্রীর সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি কমেছে। এই সংকট শুধু ভ্রমণকারীদের সীমাবদ্ধ রাখেনি, বরং দুই দেশের পারস্পরিক বাণিজ্য ও পর্যটন খাতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলেছে।

ভারতগামী বাংলাদেশি যাত্রী মঞ্জুর হায়দার মনে করেন, ভিসা নীতির পুনর্বিবেচনা দুই দেশের জন্যই উপকারী হবে। তার মতে, দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হওয়ায় এখন ভারত সরকারের উচিত এই বিষয়ে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া। 

অপরদিকে ভারতীয় পাসপোর্টধারী রবিন সরকার বলেছেন, বাংলাদেশি যাত্রীদের আসা বন্ধ থাকায় পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসা-বাণিজ্য ও পর্যটন শিল্পে উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য:

এই ওয়েবসাইটটি কোনও অফিসিয়াল ভিসা বা ভ্রমণ সংস্থা নয় এবং এই সাইটের সমস্ত তথ্য অনলাইন, নিউজ পোর্টাল, ব্লগ ও উইকিপিডিয়া থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। তাই কোন ভুল হলে ক্ষমা করবেন। এবং পসিবল হলে আমাদেরকে কমেন্ট করে জানাবেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *